বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রতিযোগিতায় থালা-বাসন উপহার দেওয়ার প্রচলন বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় | শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৮৩ বার পঠিত

শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। তদ্রুপ শেরপুরের নকলাতেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। এছাড়া জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, বার্ষিক ক্রীড়া সম্পন্ন করা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার হিসেবে থালা-বাসন প্রদান করা হয়েছে।

এমন একজন বিজয়ী মেয়ের বাবা নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, সে তাঁর মেয়ের দুইটি ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকারী মোশাররাত তাসনিম রায়তা’র পুরষ্কার হিসেবে থালা-বাসন গ্রহনের ছবি দিয়ে তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করেন।

ওই পোস্টে বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর লোকজন মন্তব্যের বক্সে শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রতিযোগিতায় থালা-বাসন উপহার দেওয়ার প্রচলন বন্ধের দাবী জানিয়েছে তাদের নিজস্ব মতামত পেশ করেছেন। অধিকাংশ মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রতিযোগিতায় থালা-বাসন উপহার দেওয়ার প্রচলন বন্ধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন গাছের চারা, জ্ঞান অর্জনের সুবিধার্থে ভালো লেখকের শিক্ষণীয় বই এবং প্রাপ্তিটাকে চিরস্মরনীয় করে রাখতে প্রত্যেক বিজয়ীকে সনদপত্র ও ক্রেষ্ট প্রদানের দাবী উত্থাপন করেছেন।

শিক্ষার্থীদের থালা-বাসন উপহার দেওয়ার পরিবর্তে গাছের চারা, বই, সনদপত্র ও ক্রেষ্ট প্রদানের দাবী উত্থাপনকারীদের মধ্যে দেশবরেণ্য গ্রন্থাগার প্রেমী বইপোকা হিসেবে সর্বজন পরিচিত বিমল চন্দ্র রয়, শিক্ষক মাহমুদুল হাসান, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন দেলু, তরুণ সাংবাদিক ও শিক্ষক হাসান মিয়া, দেশবরেণ্য উপস্থাপক মুহাম্মদ আরিফুল হক সরকার, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক মো. সেলিম রেজা, তরুণ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ এবং শিশু শিক্ষার্থী মুহতাদী মাহমুদ তাহাদী’র মন্তব্য উল্লেখযোগ্য।

নিন্মে তাদের মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
মাহমুদুল হাসান বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্তব্যের বক্সে লেখেন- ‘আমার একটি প্রশ্ন? এই থালা বাটি দেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের দেশ থেকে কবে যাবে? একটা বাচ্চা এতো কষ্ট করে গৌরব অর্জন করে কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা সেভ করার জন্য সকল জায়গাতেই এই কমন পুরস্কার গুলো দিয়ে থাকেন। অথচ সুন্দর সুন্দর ভালো মানের মেডেল, ক্রেস্ট আছে যে গুলো বাচ্চারা দীর্ঘ দিন সম্মানের সাথে স্মৃতি হিসেবে সেভ জায়গায় রাখতে পারে। আমি আমার স্কুলে এইবার বার্ষিক ক্রীড়াতে এগুলো দিয়েছি। খরচ একটু বেশি হলেও ছোট সোনামণিরা খুশি হয়েছে।’

বিমল চন্দ্র রয় লেখেন- ‘বিজয়ী ছাত্র ছাত্রীদের থালা বাটি না দিয়ে বরং ভালো মানের একটা বই উপহার হিসেবে দিতে চেষ্টা করুন। তাতে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে।’

মন্তব্যের বক্সে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার হিসেবে নিত্য ব্যবহার্য থালা-বাটী প্রদান করা হয়। এমন পণ্য পুরষ্কার হিসেবে প্রদানের প্রচলন পরিবর্তন করা জরুরি। কারন, এসব পণ্য কোন একদিন বিনষ্ট হয়ে যাবে! তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে পুরষ্কার হিসেবে বই, গাছ ও সনদপত্র প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের দাবি। আমি আশাকরি সরকারসহ কর্তৃপক্ষসহ এবিষয়ে দ্রুতই সুনজর দিবেন।’

মুহাম্মদ আরিফুল হক সরকার বলেন, ‘ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ যেকোন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে এইসব থালাবাটির বদলে বই ও গাছ দেয়ার প্রচলন করা খুবই জরুরি।’

সেলিম রেজা বলেন, ‘দেশের প্রায় শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রশংসনীয়। আর পুরষ্কার হিসেবে নিত্য ব্যবহার্য থালা, বাটী প্রদান করা হয়। এমন ক্ষয় হয়ে যাওয়ার উপযোগী পণ্য পুরষ্কার হিসেবে প্রদানের প্রচলন পরিবর্তন করা দরকার। কারন এসব পণ্য কোন একদিন বিনষ্ট হয়ে যাবে! তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে পুরষ্কার হিসেবে এসবের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই, গাছ, সনদপত্র ও ক্রেষ্ট প্রদানে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করা এখন সময়ের দাবি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আশাকরি সরকার বাহাদুর এবিষয়ে দ্রুতই সুনজর দিবেন।’

হাসান মিয়া মন্তব্যে লেখেন- ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরষ্কার হিসেবে থালা-বাসন দেওয়ার প্রচলন পরিবর্তন করা জরুরি। কারণ এসব জিনিস একসময় নষ্ট হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে কোনো উপকারে আসে না। এসবের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের হাতে বই, গাছ বা সম্মানসূচক সনদ তুলে দিলে তারা জ্ঞান অর্জন ও পরিবেশের উন্নয়নে উৎসাহিত হবে। আর এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং জাতীয়ভাবেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তাই সময়ের দাবি হলো পুরষ্কার ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা। আশা করি, সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেব।’

লিমন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরষ্কার হিসেবে থালা-বাসন দেওয়ার প্রচলন পরিবর্তন করা জরুরি। কারণ এসব জিনিস একসময় নষ্ট হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে কোনো উপকারে আসে না। এসবের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের হাতে বই, গাছ বা সম্মানসূচক সনদ তুলে দিলে তারা জ্ঞান অর্জন ও পরিবেশের উন্নয়নে উৎসাহিত হবে। আর এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং জাতীয়ভাবেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তাই সময়ের দাবি হলো পুরষ্কার ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা। আশা করি, সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেব।’

শিশু শিক্ষার্থী মুহতাদী মাহমুদ তাহাদী তার মতামতে জানায়, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলবো, শিক্ষার্থীদের মাঝে সকল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে প্রথমত একটি সনদপত্র, দ্বিতীয়ত সামর্থ্য অনুযায়ী পুরষ্কার হিসেবে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা ও ভালো লেখকের শিক্ষনীয় বই, পাশাপাশি বরাদ্দ থাকলে বিজয়ী সবাইকে সম্মানসূচক একটি করে ক্রেষ্ট দিলে আমরা নিজেরাসহ দেশ ও জাতির জন্য সারাজীবন উপকারে আসবে।’ তাদের দাবী সংশ্লিষ্ট এমন সকল যৌক্তিক মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন অগণিত ফেইসবুক ব্যবহারকারী সুশীলজন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।