শেরপুর সীমান্তে চোরাকারবারীর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে চোরাকারবারী চক্র কর্তৃক সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোররাতে এই হমলার ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে হামলার সাথে সরাসরি জড়িত বালু দস্যু মাসুদকে প্রধান আসামী করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক শ্রীবরদী থানায় অভিযোগ (মামলা নং ১৮) দায়ের করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার কামনা করছেন জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকগন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন শেরপুর প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি রফিক মজিদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম স¤্রাট, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান রিপন। তারা শ্রীবরদীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে গভীর রাতে বালুবাহী ট্রাকে করে ভারতীয় মদ ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক এবং বিভিন্ন চোরাই মালামাল পাচারের খবর সংগ্রহের কাজ শেষ করে ফেরার পথে বালু দস্যু মাসুদ ও আলামিনসহ ১৫-২০ জনের একটি চোরাকারবারীর দল তাদের উপর হামলা চালায়। তথ্য মতে, সাংবাদিকদের গাড়িটি শয়তান বাজার (মেঘাদল) মোড়ে পৌঁছালে দেশীয় অস্ত্র উচিয়ে সাংবাদিকদের বব্যহারকরা প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে এবং কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাইভেটকারটি ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া হয়। পরে খবরের জন্য সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত বিনষ্ট করতে ১টি ক্যামেরা ও ১টি এনড্রয়েট মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে তা ভেঙ্গে ছুড়ে ফেলে দেয় তারা। এসময় সাংবাদিকরা তাদের সংগৃহীত খবরের তথ্য উপাত্ত রক্ষা করতে নিজেদের ক্যামেরা ও মোবাইল সেট ভাঙ্গনের হাত থেকে নিরাপদে রাখতে গেলে চোরাকারবারী চক্রটি দেশীয় অস্ত্র উচিয়ে চরম আতংক সৃষ্টি করে এবং সাংবাদিকদের অবরোধ করে রাখে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও তাদেরকে অবরোধ করে রাখার খবর পেয়ে শ্রীবরদী থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারীরা কৌশলে দ্রুত পালিয়ে যায়।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ভুক্তভোগী মাসুদ হাসান বাদল বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিলো শ্রীবরদী সীমান্তে রাত নামলেই অবৈধ বালুর গাড়িতে মাদক পাচার হয়। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা সেখানে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি এবং ভিডিও ধারন করেছি। সীমান্ত এলাকার গডফাদার নামে পরিচিত বালু দস্যু মাসুদ ও তার বাহিনী প্রতিরাতেই পাহাড় থেকে ইজারা বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করার পাশাপাশি বালুবাহী ট্রাকে ভারতীয় মদ ও ফেনসিডিল পাচার করে থাকে। বালুর ট্রাকে মাদক পাচারকালীন সময়ের ছবি ও ভিডিও ধারন করাই আমাদের কাল হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা সকল উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ও অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে লেখবেই। কোন ভাবেই তাদের কলমকে থামিয়ে রাখা যাবেনা।’
শ্রীবরদী থানার ওসি আনোয়ার জাহিদ বলেন, রাতে চোরাকারবারিরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। পরে আমি খবর পেয়ে পুলিশ এবং সীমান্ত এলাকায় টহলে থাকা ডিবি পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করি। এ বিষয়ে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান রিপন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের অবাদ সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে চোরাকারবারীরা কেন, কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা। খবরের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ফিরার পথে সাংবাদিকদের ওপর হামলার সাথে যে বা যারা জড়িত, তারা যে দলের-ই হউক না-কেন, তাদেরকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।