শেরপুরের নকলায় জামাল উদ্দিন (৮৫) নামে গৃহহীন এক বৃদ্ধ ২০ বছর ধরে রাত কাটান স্থানীয় এক ওয়াক্তিয়া মসজিদ-মক্তবে। জামাল উদ্দিন উপজেলার ১নং ডিজিটাল গণপদ্দী ইউনিয়নের বড়ইতার গ্রামের মৃত আছিম উদ্দিনের ছেলে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাথায় পাগড়ী পরিহিত লাঠি হাতে বড়ইতার গ্রামের হাজীবাড়ী ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তব থেকে বেড় হচ্ছেন তিনি। এসময় তার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।
তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার আগে ৪ মেয়ে ও স্ত্রীসহ বসবাসের জন্য একটি ছোট্ট ভাঙ্গা ঘর ছিলো। ছিলো বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতাংশ জমির বাড়ি ভিটা। স্ত্রী মারা যাওয়ার আগের বছর ঘরটি সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে মাটিতে পরে যায়। ফলে তিনি হয়ে যান গৃহহীন। মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে চলে যাওয়ায় এবং স্ত্রী মারা যাওয়ায় তিনি একা হয়ে পরেন। তাই একাকিত্ব সহ্য করতে না পেরে এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ভরসা করে তার বাবার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ১০ শতাংশ জমিটুকু বিক্রি করে ওই টাকায় পবিত্র উমরাহ পালন করে আসেন জামাল উদ্দিন। এর পরে এলাকাবাসীর অর্থায়নে পরিচালিত হাজীবাড়ী ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবে বসবাসের মনস্থির করেন। এলাকাবাসীর কাছে মৌখিক আবেদন করে তাদের অনুমতিক্রমে ওই মসজিদ-মক্তবের এক কোণায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। এলাকাবাসীরা মানবিক দিক বিবেচনা করে একেক জন একেক দিন তার জন্য মক্তবে খাবার পৌঁছেদেন। এলাকাবাসী যা দেন তা খেয়েই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বৃদ্ধ জামালের। সবার মতো স্বাভাবিক ভাবে চলতে ফিরতে না পারায় নিজের ইচ্ছা মতো খাবার ও ঔষুধ কিনতে পারেন না তিনি। ২০টি বছর ধরে তার এভাবেই চলছে। জামাল উদ্দিন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত লোকের সার্বিক সহযোগিতায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাদ্দকৃত সমাজসেবা হতে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছি। এখন এক আল্লাহর রহমত ও এলাকাবাসীর মানবিক সহায়তা ছাড়া আমার আর কোন সম্বল নেই। তবে মাঝে মধ্যে মেয়ে ও মেয়ের জামাইগন খোঁজ খবর নেন বলেও তিনি জানান।
গণপদ্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল জানান, ওই বৃদ্ধ চাচাকে সরকারি ঘর দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, জন্ম নিয়েছি আল্লাহর ইশারায়। মৃত্যুও হবে তার ইশারাতেই। তাই স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে বাবার রেখে যাওয়া ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত ১০ শতাংশ জমি ছিলো তা বিক্রি করে পবিত্র উমরাহ পালন করেছি। আল্লাহর ঘর তোয়াফ করার সুযোগ হয়েছে, শেষ নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করে এসেছি। এখন আর নিজের ঘর-বাড়ী দিয়ে কি হবে? তাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে তার নামে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল জানান।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোমান হাসান বলেন, এই বিষয়টি আমার আগে জানা ছিলোনা। আজকেই প্রথম শুনলাম, এখন থেকে অফিসিয়ালী খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই বৃদ্ধ চাচার খোঁজ খবর রাখব ইনশাআল্লাহ।
এবিষয়ে স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃদ্ধ জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি সম্পূর্ণভাবে একা হয়ে পড়েন। পরে এলাকাবাসীর অনুমতিক্রমে প্রায় ২০ বছর ধরে বড়ইতার গ্রামের হাজীবাড়ী ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবের এক কোণায় কাপড়ের ভেড়া দিয়ে তিনি বসবাস করছেন। তাকে মেয়ে ও মেয়ের স্বামীরা নিতে চাইলেও তিনি তাদের বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে নারাজ। জামাল উদ্দিন এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর ভরসা করেননা বলেও স্থানীয়রা জানান। তবে ওই ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবের পাশের খালি জায়গায় একটি ছোট্ট ঘর তৈরী করে দিলে সেখানে তিনি নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন। এছাড়া ওই ঘরে ইমাম মোয়াজ্জেমগনও থাকতে পারতেন বলে এলাকাবাসীরা মনে করছেন।