সমকালীন বাংলা: আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?
দেলোয়ার: ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনাদের সকলের দোয়ার বরকতে ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
সমকালীন বাংলা: আলহামদুলিল্লাহ, আমরাও ভালো আছি। শুরুতেই আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার পরিচয়টা জানতে চাই।
দেলোয়ার: আমি দেলোয়ার হোসেন, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। আমরা ৭ ভাই বোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। আমার লেখাপড়া শুরু হয়েছিল কওমি মাদ্রাসায়। পরে স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করি। এখন জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে অনার্স করছি। আমার বাবা একজন আদর্শ কৃষক এবং মা গৃহিণী। একটি ঔষুধ কোম্পানিতে চাকরির সুবাদ ২০১৪ সাল থেকে আমি শেরপুরে আছি। এখন শেরপুর আমার প্রিয়, ভলো লাগার জেলা। এখন আমি শেরপুর থাকার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও থাকি। ঢাকায় গত বছরের শেষ দিকে ‘আওয়ার শেরপুর’-এর একটা অফিস করা হয়েছে ।
সমকালীন বাংলা: আচ্ছা দেলোয়ার ভাই, শেরপুর জেলাকে দেশ-বিদেশে একনামে পরিচিতি করতে এবং জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য ও জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা অপরিসীম। আপনি এমন কাজে কেন আসলেন? এতে আপনার লাভ কি?
দেলোয়ার: ২০১৪ সালে আমি যখন শেরপুরে আসি এরপর থেকে লম্বা সময় ধরে শেরপুরের চাল ডাল খেয়ে বড় হয়েছি। তাই এর প্রতি আমার আলাদা একটা আগ্রহ আছে এবং দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ পথ চলায় আমি দেখলাম শেরপুর নিয়ে কাজ করার মত অনেক সুযোগ আছে। পিছিয়ে থাকে জেলাগুলোর মধ্যে শেরপুর একটি। এ কারণেই এখানে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি করা সম্ভব।
আমার লাভের কথা যদি বলি প্রথমে বলতে হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে গিয়ে যে ভালোবাসা ও স্নেহ পাই, এখানে লাভ-লোকসানের হিসেব আসেতেই পারেনা। ভালোবাসা ও স্নেহের সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা চলে না। দ্বিতীয়ত আমার নতুন নতুন কিছু করতে ভালো লাগে। তাতে আমি আনন্দ পাই। তৃতীয়ত আমি দারুণভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি, যা আমার সারা জীবন কাজে আসবে। আরেকটা বিষয় বলতে পারি সেটা হচ্ছে এই ক্ষেত্রে আমার ক্যারিয়ারও তৈরি হয়ে যাচ্ছে; যেমন জেলার বিখ্যাত পণ্যগুলা বিক্রি করে একটা লভ্যাংশ পাই, টিকিট বিক্রি করতে করতে ভবিষ্যতে একটা লভ্যাংশ পাব যা আমার আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
সমকালীন বাংলা: আপাতদৃষ্টিতে এমন অলাভজনক কাজে নিজেকে জড়িত করে কেমন অনুভব করেন?
দেলোয়ার: অলাভজনক কাজে সবচেয়ে বেশি মানুষের দোয়া, শুভকামনা, সহযোগিতা ও আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। যা অন্য কিছুতে এতাটা সহজে সম্ভব নয়। আমি ২০১৮ সালে ওয়েবসাইট করেছি। তখন আয়ের কোন ব্যাপার ছিলনা। শুধু মানুষকে তথ্য দিতাম তা থেকে মানুষ উপকৃত হতো; এতেই আমার ভালো লাগতো। আর ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে গিয়ে সময় ও অর্থের খরচ হতো। যেটা নিয়ে আমি কখনো কার্পণ্য করতাম না। ইদানিং কালে এসে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আয় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেটা আমাকে আরও বেশি সময় দিতে ও আয় করার পথের সন্ধান দিয়েছে।
সমকালীন বাংলা: আপনার এই কাজে কারো সহযোগিতা পেয়েছেন কি? পেয়ে থাকলে তারা কোন পর্যায়ের লোক?
দেলোয়ার: আমার সকল ভালো কাজে সব পেশাশ্রেণির লোকের পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।
সমকালীন বাংলা: তথ্যমতে শেরপুরের তুলশী মালা চালকে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্যের স্বীকৃতি পেতে এবং ছানার পায়েশকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা রয়েছে। কিভাবে আপনি ভূমিকা রেখেছেন?
দেলোয়ার: আজকাল দেশের অধিকাংশ পরিবারের কোন না কোন সদস্যের হাতে এনড্রয়েট মোবাইল আছে। তাই অনলাইন ভিত্তিক প্রচার প্রসারের মাধ্যমে সবাইকে জানান দিতে আমি নিয়মিত কাজ করেছি। শেরপুরের ছানার পায়েশকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে জেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সাহায্য করেছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত খাবারের দেশ-বিদেশে পরিচিতির লক্ষে ’বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভাল: টেস্ট অফ বাংলাদেশ’ নামে এক বিশেষ মেলা হয় রাজধানী ঢাকার বনানী কামাল আতাতুর্ক পার্কে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই কান্ট্রি ব্রান্ডিং একটি অসাধারণ আয়োজন ছিলো। এই মেলায় ৩৯টি পণ্যের মধ্যে শেরপুরের ছানার পায়েস ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চালের আলাদা দুটি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। শেরপুরের এই পণ্য দুইটি রাজধানীবাসীসহ মেলায় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে আসা দেশ-বিদেশের দর্শকদের মন ছোঁয়েছিলো। শেরপুরের ছানার পায়েশ ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চালের কদর ছিলো আকাশ চুম্বী। তৎকালীন সরকারি প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ ও দেশি-বিদেশী গুরুত্ব ব্যক্তিবর্গ আমাদের তুলশী মালা চাল ও ছানার পায়েশের স্বাদ নিয়েছেন। যা অনেক মিডিয়াতে সাংবাদিক ভাইয়েরা তুলে ধরেছেন। এর পরে সমগ্র দেশে যেন শেরপুরকে তুলশী মালা চাল ও ছানার পায়েশের জেলা হিসেবে শেরপুরকে নতুন করে চিনছেন। এটা আমার জীবনের ইতিহাস সৃষ্টিকারী অভিজ্ঞতা। এরপরেই ডিসেম্বর মাসে শেরপুরের ছানার পায়েশ জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পরে আমি আনন্দে মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিলিয়েছি। আমার দেখাদেখি শহরের অনেক মিষ্টি ব্যবসায়ী মিষ্টি বিলিয়েছেন। এই স্বীকৃতির পর দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক কাভারেজ হয়েছে। সারাদেশের মানুষ জেনেছে, এতে আমি যে কতটা আনন্দ পেয়েছি তা বলে বুঝানো মুশকিল।
সমকালীন বাংলা: আপনার কি ভবিষ্যতে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করার ইচ্ছে আছে?
দেলোয়ার: বলতে পারেন আমার জীবনের শুরুটা হয়েছিল বেসকারি একটি চাকরি জীবন দিয়েই। আমি ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই একটা ঔষুধ কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলাম, সেই সুবাদে আজো আমি শেরপুরে। আমার লেখাপড়া চলছে জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী আশেক মাহমুদ কলেজে। তবে এখন আমি উদ্যোক্তা হিসেবে মজা পেয়ে গেছি; তাই হয়তোবা কখনো অন্যের অধীনে চাকরি করা আর হবেনা, আগ্রহও নেই। তবুও আমার রুমমেটের পিরাপিরিতে ২০১৮ সালের দিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। আমার নতুন আগ্রহের জায়গা হলো নতুন নতুন আইডিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা । এতে আমি সব চেয়ে বেশি তৃৃপ্তি পাই।
সমকালীন বাংলা: আপনার এই কাজে তরুণ ও শিক্ষিত বেকারদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা আছে কি? থাকলে কেমন সুযোগ তারা ভোগ করতে পারবেন?
দেলোয়ার: তরুণ ও শিক্ষিত বেকার বাই-বোনেরা আমার থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অবশ্যই নতুন কিছু করতে পারেন। এখান থেকে তারা প্রযুক্ত নির্ভর নানান উদ্যোগ নিতে পারেন। যেটা তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সহযোগীতা করবে। হতে পারে কেউ ই-কমার্স ব্যবসায় আসলো, তাহলে নিজেদের তৈরি করা পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারবেন। মানুষের একটা সমস্যা চিহ্নিত করে তরুণরা সফটওয়্যার বা অ্যাপ তৈরি করে সব পেশাশ্রণির মানুষকে সমাধান দিতে পারেন। এছাড়া ভবিষ্যতে আমাদের এখানে যে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তারা কর্মী হিসেবে আমাদের স্বপ্নগুলো বড় করতে অংশীজন হতে পারেন। ইতিমধ্যে আমাদের গ্রাফিক ডিজাইনার ও ওয়েব ডেভেলপার আছে। আগামীতে কাস্টমার কেয়ার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লোকের প্রয়োজন হবে। তখন নিশ্চয় কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে। শেরপুরে অনেক প্রতিভাবান তরুণ রয়েছে। যারা একটু উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা হতে পারতো এবং অনেক ভালো কিছু করে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। শেরপুরের মত ছোট ও পিছিয়ে থাকা জেলা গুলোতে প্রযুক্তি নির্ভর সাপোর্ট বেশি দরকার।
তবে আমি লেখাপড়াকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমি আশাকরি শেরপুরে যেসকল শিক্ষার্থী আছেন তারা লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিবে এবং সিরিয়াসভাবে লেখাপড়া করবেন। তারা অনেক বেশি কনটেন্ট তৈরি করতে ও শেরপুরকে উপস্থাপন করতে এগিয়ে আসবেন। তাতে একদিকে নিজের জেলার পরিচিত বাড়বে, অন্যদিকে আয়ের পথ সুগম হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান, কমবে বেকারত্ব।
সমকালীন বাংলা: আমাদের সময় দেওয়া জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দেলোয়ার: আপনাদেরকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের মাধ্যমে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পরিবারের সবারসহ সংশ্লিষ্ট সকল গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধ্যনাবদ জ্ঞাপন করছি।