মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে শেরপুরের নকলায় ফেরিকরে বাংলাদেশের মানচিত্র, বিভিন্ন ধরনের পতাকা ও মহান বিজয় দিবস-২০২৪ লেখা সমৃদ্ধ হাত ও মাথা বন্ধনী বিক্রির ধুম পড়েছে।
লাখো শহীদের রক্তে, মা-বোনদের সম্মান আর ভাইদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এই বাংলাদেশ। তারই প্রতিকী উপস্থাপন মানচিত্র ও পতাকা বিক্রি করেই অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। এমন একজন সৌখিন ও মৌসুমী ফেরিওয়ালা ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার নৈয়হাটী গ্রামের হানিফ উদ্দিন।
হানিফ উদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সে প্রতিটি ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র ও পতাকা পৌঁছে দিতে এবং মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রানিত হয়েই এমন পেশা বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার মাস মার্চ ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরসহ ফেব্রুয়ারী, এপ্রিল ও আগস্ট মাসে পতাকা, মানচিত্র ও ফুল বেশি বিক্রি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মার্চ ও ডিসেম্বরে। এই দুই মাসের মতো সারা বছর পতাকা, মানচিত্র ও ফুল বিক্রি হলে অন্যকোন পেশার চিন্তা করতে হতোনা বলে তিনি জানান। তিনি জানান, এটি ফেরিওয়ালার ও কষ্টদায়ক ব্যবসা হলেও লাভ অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে কম নয় বরং বেশি। এ ব্যবসায় এক মৌসুমে (১০ থেকে ১৫ দিন) ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলে প্রায় দ্বিগুণ লাভ থাকে। যা অন্যকোন ব্যবসার ক্ষেত্রে কল্পানাও করা যায়না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্য এক ফেরিওয়ালা রহুল আমিন জানান, লেখা পড়ার পাশাপাশি পতাকা ও মানচিত্র ফেরি করে যা লাভহয় তাদিয়ে তার সারা বছরের পড়া লেখার খরচ চলেযায়। যত দিন পর্যন্ত লেখা পড়া শেষ না হবে বা অন্য কোন ভালো পেশা খোঁজে না পাবেন ততদিন মৌসুমী এ পেশা ধরে রাখবেন তিনি।
তারা জানান, এসময় শুধু জাতীয় পতাকা নয়, লাল-সবুজের কাগজে তৈরি মাথার ক্যাপ, রাবারের তৈরি হাত ও মাথার ব্যাজ, মোটর সাইকেলসহ ছোট পরিবহনের জন্য পরিমিত মাপের পতাকা বেশি বিক্রি হয়। মাপ ও কাপড় ভেদে এসব পতাকা ১০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করে বেচা-কেনা হয়। তাদের বিক্রি করা পতাকা যখন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে উড়ানো হয়, তাদেখে তাদের খুব ভালো লাগে বলে ফেরিওয়লারা জানান।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম নামের এক ফেরিওয়ালা বলেন, জাতীয় পতাকার ফেরিওয়ালা হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। এছাড়াও সকল মানুষের হাতে একটি করে লাল-সবুজের পতাকা দিতে পারলে নিজেকে স্বার্থক মনে হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আমি মনের টানে পতাকা বিক্রি করি। তা থেকে যে লাভ হয়, তাদিয়েই সারা বছরের পড়া-লেখাসহ অন্যান্য খরচ চলে তার।
পতাকা ও হাত-মাথার বন্ধনী কিনতে আসা নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন ও ফজলে রাব্বী রাজন, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আমিন ও সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম লালন জানান, বাঙালি জাতি হিসেবে সবার ঘরে অন্তত একটি করে জাতীয় পতাকা ও দেশের মানাচিত্র থাকা উচিত। বাসা-বাড়িতে রাখা পতাকা ও মানচিত্র দেখে নতুন প্রজন্মরা দেশ ও জাতি সম্পর্কে জানার আগ্রহী হবে।
তরুণ সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন বাবু, হাসান মিয়া ও গোলাম হাসান লিমন, ব্যবসায়ী সোহাগ ও নূর হোসেনসহ অনেকে বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করার ক্ষেত্রে সবার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও দেশের মানচিত্র দৃশ্যমান রাখা উচিত। তাতে শিশুরা স্বাভাবিক কারনেই খুব সহজেই দেশ ও জাতির সম্পর্কে জানার আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শুধু সরকার নির্ধারিত ও বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে নয়, সারা বছর সবকর্ম দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালের মতো সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠন ও বাসা-বাড়ির উঁচু ভবন গুলোতে নিয়ম মোতাবেক জাতীয় পতাকা উড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করেন সুধীজন। এতে শিশুরা পতাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে ছোট কালহতেই নিজের জাতীয়তার প্রতি আন্তরিক হবে এবং দেশ প্রেমিক হয়ে গড়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।