মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

আগাম ও বিএডিসি’র বীজআলুতে লাভ বেশি পাওয়ায় চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

মো. মোশারফ হোসাইন:
  • প্রকাশের সময় | শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০১ বার পঠিত

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর আওতায় শেরপুর জেলার নকলা জোনে গত বছর বীজআলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং আগাম জাতের আলুর দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা বীজআলু ও আগাম জাতের আলু চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএডিসির বীজআলু ও আগাম জাতের আলু চাষ করা হয়েছে।

বরাবরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চরমধুয়া, বন্ধটেকী ও বাছুরআলগা; চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা ও চরবসন্তী; পাঠাকাটা ইউনিয়নের দধিয়ারচর, পাঠাকাটা ও চকপাঠাকাটা; বানেশ্বরদী ইউনিয়নের মোজারকান্দা, ভূরদী, পোলাদেশী ও বানেশ্বরদী এলাকায় বিএডিসির বীজআলু ও আগাম উন্নত জাতের আলু বেশি চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় আলু রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। রোপন পরবর্তী সেবায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী।

বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, নকলায় মধ্য নভেম্বর থেকে শুরু করে নভেম্বরের শেষ তারিখ পর্যন্ত বীজআলু রোপন করা হয়েছে। যদিও নভেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বিএডিসি বীজআলু রোপনের উত্তম সময়। তিনি আরো জানান, গত বছর উপজেলায় ১৪টি ব্লকে চুক্তিবদ্ধ ২৬ জন কৃষকসহ অর্ধশতাধিক আলু চাষীর মাধ্যমে ২৪৫ একর জমিতে বিএডিসি’র আওতায় বীজআলু রোপন করা হয়েছিল। ওই সকল জমিতে প্রতি একরে ‘এ’ গ্রেডের ৬৪০ কেজি ও ‘বি’ গ্রেডের ৭২০ কেজি হারে মোট প্রায় ১৯০ মেট্রিকটন বিএডিসির আলুবীজ রোপন করা হয়। গত বছর প্রতি একরে ৬ মেট্রিকটন হারে নকলা জোনের আওতায় ২৪৫ একর জমিতে ১,৪৩৭ মেট্রিকটন বীজআলু উৎপাদন হয়েছিলো। বাম্পার ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় এবার জমির পরিমাণ ও আলু চাষীর সংখ্যা বেড়েছে। এবার ২৬০ একর জমিতে বীজআলু রোপন করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৫৬০ মেট্রিকটন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন নাহলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, গত বছর উপজেলায় ১,৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর আবাদ হয়েছিল। এবছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৬১৫ হেক্টর। প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর কর্মকর্তারা।

বিএডিসি হিমাগারের উপসহকারী পরিচালক (টিসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, এবছর নকলা জোনে উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও রপ্তানী যোগ্য ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, কার্ডিনাল, সানশাইন, সান্তানা, এলুইটি, রশিদা, লেডিরোসেটা জাতের বীজআলু বেশি রোপন করা হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় বিএডিসি’র বীজআলু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। বিএডিসি’র বিভিন্ন স্তরের কৃষি কর্মকর্তা ও বিএডিসির স্থানীয় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীরা আশা করছেন এ অঞ্চলে বীজআলুর আবাদ দিন দিন বাড়বে।

চন্দ্রকোনার বীজআলুু চাষী কামরুজ্জামান গেন্দু ও গোলাম মোস্তফা জানান, গেল বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আলু চাষের অনুকূলে আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে উৎপাদন বাড়বে বলে তারা মনে করছেন। তাছাড়া রোপনের পরে দুই মাসের মধ্যে আলু সংগ্রহ করা যায় বলে বীজআলু ও আগাম জাতের আলু চাষীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছায়েদুল হক ও পোলাদেশী এলাকার বীজআলু চাষী হাকলিজুর রহমান জানান, গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসির কর্মকর্তাগন বীজআলুর বিভিন্ন ব্লক নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। তারা সরাসরি মাঠে গিয়ে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা দিচ্ছেন। গত বছর আলুর ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার চাষীর সংখ্যা ও আলু আবাদের জমির পরিমাণ বেড়েছে। এবছর সানসাইন ও সান্তানা জাতের আলু বেশি চাষ করা হয়েছে বলে চাষীরা জানান।

অন্যএক আলুচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মূলত ব্যবসায়ী, মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। তবে আমার বোন জামাই উত্তর পোলাদেশী এলাকার আবু বক্কর গত বছর আলু চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই এবছর আমি তার পরামর্শে ১০ একর জমিতে সানসাইন ও সান্তানা জাতের আলু রোপন করেছি। কোন প্রাকৃতিক সমস্যার সম্মুখিন না হলে দ্বিগুণ লাভ পেতে পারেন বলে তিনি আশা করছেন।

আলু রোপনের নারী শ্রমিক আসমা, হেলেনা, হুসনাসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, আগে এই সময়টাতে তেমন কোন কাজ থাকতো না, তাই নারী শ্রমিকদের চাহিদা ছিলোনা। এখন আগাম জাতের আলু ও বিএডিসি বীজআলু রোপনের কাজ থাকায় তাদের চাহিদা বেড়েছে, বেড়েছে শ্রমিক মজুরিও। বেড়েছে সংসারের আয়, পরিবারে এসেছে শান্তি।

কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় না পরলে এবার আলু চাষীরা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবেন, এমনটাই মনে করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। নকলার মাটি আলু চাষের উপযোগী। তাই দুই মাস মেয়াদী আগাম জাতের আলু চাষ করে যেকেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি কর্মকর্তাগন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।