মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

কৃষি বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলা জুড়ে তালগাছ

মো. মোশারফ হোসাইন:
  • প্রকাশের সময় | মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮১ বার পঠিত

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে; উঁকি মারে আকাশে–’। ‘ওই দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ; ঐখানেতে বাস করে কানাবগির ছা–’। এরকম অনেক ছাড়া বা কবিতা পাঠ্যপুস্তকে এখনো পাওয়া গেলেও বাস্তবে তালগাছ বিলুপ্তের পথে। তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে তালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্ঠা চালানো হচ্ছে।

তাল গাছ সংরক্ষণের জন্য কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উদ্যোগে শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রায় প্রতিটি মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও বিভিন্ন গ্রামিণ সড়কের দুই পাশে সাড়ি সাড়ি তাল গাছ পথচারিসহ সবার নজর কাড়ছে। সৌন্দর্য্য বেড়েছে কবর স্থান, ঈদগাহ, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের।

এসব তাল গাছ বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই তাল গাছ রোপন করতে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, কবর স্থান, ঈদগাহ, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাসহ চলমান নির্মিত উরফা উদ্যানপার্কে তালগাছ রোপন করা হয়েছে। তথ্য মতে, ২০১১-১২ অর্থ বছরেই উপজেলায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার তালবীজ রোপন করা হয়েছে। উপজেলায় সব মিলিয়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার ছোট-বড় তালগাছ রয়েছে। রাস্তার দুই পাশে যে দিকে চোখ যায় শুধু ছোট-মাঝারী তালগাছ দেখাযায়।

উচু তালগাছে গাছে ধরা তালফল ও বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা এবং পাখির কিচিমির শব্দ কার না ভালো লাগে। এই ফলের আদি নিবাস আফ্রিকাতে হলেও বাংলাদেশে কমবেশি সব জেলাতেই দেখা যায়। সুপরিচিত ফলগুলোতে তালের অবদান কম নয়। ভাদ্রমাসে তালের পিঠা, তালের পাখা, তাল পাতার পাটি, মাদুর, চাটাই ও ছাতা ইত্যাদি বাংলার ঐতিহ্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় বছর ব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্প ও বাংলাদেশ সুগার ক্রপস রিসোর্স ইন্সটিটিউট, বন বিভাগ ও জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টারসহ নকলা অসহায় সহায়তা সংস্থা, নকলা অদম্য মেধাবী সহায়তা সংস্থা, ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থা, মানবতার দুয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিডি ক্লিন নকলা শাখা, ব্লাড ব্যাংক অব নকলা, রক্তসৈনিক বাংলাদেশ’র নকলা শাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শেরপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, সামাজিক বনায়ন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকার প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চত্বরে তালের বীজ রোপন করা হয়। এরই মধ্যে কিছু কিছু গাছ বেশ উঁচু হয়েছে। তাতে বেড়েছে রাস্তার সৌন্দর্য; আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমীদের।

রাস্তা ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় বছর ব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্প ও বাংলাদেশ সুগার ক্রপস রিসোর্স ইন্সটিটিউটের সহযোগিতায় উপজেলার উরফা ইউনিয়নের উরফা ইকো পার্ক ও রাস্তার পাশে ২ সহস্্রধিক তালের বীজ রোপন করা হয়। এছাড়াও জামালপুর হর্টিকালচারের সহযোগিতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নকলার আয়োজনে ঢাকা-নাকুগাঁও স্থলবন্দর রাস্তার নকলার পাইস্কা মোড় হতে গড়েরগাঁও মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে ১,১৫০টি দেশীয় উন্নত জাতের তালের বীজ রোপণ করা হয়। এসব তালগাছ উন্নত ফলন ও বর্ধনশীল।

এসব তাল বীজ রোপন কর্মসূচীতে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবকে ও বর্তমান মহাপরিচালকগন, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক, শেরপুর খামার বাড়ীর উপপরিচালক ও ডিটিও, জামালপুর হর্টিকালচারের উপপরিচালক, উদ্যান কর্মকর্তা, বন বিভাগের কর্মকর্তাগন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধগন উপস্থিত ছিলেন।

অনেকেই জানান, তালবীজ ও তালের রস পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। তাল গাছ বিলুপ্তির চরম হুমকিতে থাকা বাবুই পাখির আবাসস্থল। এ গাছের পাতা ঝড়েনা ও বেশি ছায়া হয়না, তাই ফসলের ক্ষতি করেনা। রাস্তার বা নদীর তীর ভাঙ্গন রোধেও তাল গাছের জুড়ি নেই।

খুব দ্রুতই নকলায় তাল ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য, অন্য দিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তাগন। এই এলাকায় তালগাছ এক সময় সম্পদে পরিনত হবে। তালের পাতা ও তালের আশেঁর উপর নির্ভর করে গড়ে উঠতে পারে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সৃষ্টি হতে পারে নতুন নতুন কর্মসংস্থান; এমনটাই মনে করছেন তারা।

 

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।