শেরপুরের নকলায় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা গ্রহনে মেয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্বুদ্ধ করণ সভার কর্মসূচি চলছে। এর অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলার বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় উদ্বুদ্ধ করণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাাদ্রাসাটির সুপার মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বানেশ্বরদী ইউপির চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার মহব্বত এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নকলা উপজেলা শাখার আমীর গোলাম সারোয়ার। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, সহসুপার মাওলানা মো. ফজলুল করিম, সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন ও নুসরাত জাহান নিপা প্রমুখ।
এসময় সহকারী মৌলভী হযরত আলী ও ফুলেছা খাতুন, সহকারী শিক্ষক মাহাদী মাসুদ, তাহেরা সুলতানা, সবুজা খাতুন, মুক্তা খাতুন, কব্দুল হোসেন, ইয়াছিন আহাম্মেদ, উজ্জল মিয়া, আরিফ হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী ও ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই টিকার পার্শপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে মর্মে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেলেও সংশ্লিষ্ট রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পার্শপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রকৃত পক্ষে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাটি মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে চিকিৎসকদের বরাতে বক্তারা জানান। তারা এক গবেষণার তথ্য সূত্রে জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন এবং প্রতি ১০০জন নারীর মধ্যে গড়ে ১১ জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পড়–য়া শিক্ষার্থী অথবা ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রেজিষ্ট্রেশনপূর্বক এ টিকা গ্রহণ করছেন। এছাড়া ৯ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুর মুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা গ্রহন করা এবং ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের অন্তত প্রতি ৩ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করার পরামর্শ প্রদান করেন তারা।
বক্তারা বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার নারীর মৃত্যু হলেও, কেবল টিকাদানের মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টিকা হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই টিকা নেওয়া মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে বলে এক গবেষণার তথ্য মোতাবেক তারা জানান।
উল্লেখ্য, দ্যা ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি), ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-এর সহায়াতায় সারাদেশের ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখেরও বেশি মেয়েকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টিকা প্রদানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় শেরপুরের নকলাতেও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এই ধাপে উপজেলার ১১ হাজার ৮৭২ জন মেয়েকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৬৭ জন ও কমিউনিটি ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫ জন মেয়ে। তবে ড্রপ আউট হওয়া, বিয়ে হয়ে যাওয়া, অন্যত্র চলে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা, গুজবে কান দেওয়া ও টিকা গ্রহনের ভয়সহ বিভিন্ন কারনে নির্ধারিত দিন তারিখের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। তাই প্রাপ্য সবাইকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিশেষ বিবেচনায় ও ব্যবস্থাপনায় টিকাদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।