সারা দেশের ন্যায় শেরপুরের নকলাতে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এই ধাপে উপজেলার ১১ হাজার ৮৭২ জন মেয়েকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৬৭ জন ও কমিউনিটি ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫ জন মেয়ে।
‘এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিন, জরায়ুর মুখ ক্যান্সার রুখে দিন’-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে উপজেলাব্যাপি টিকাদান কার্যক্রম চলছে। টিকাদান ক্যাম্পেইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই কার্যক্রম সারা দেশ জুড়ে এক মাসব্যাপী চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিকার পার্শপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে মর্মে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেলেও সংশ্লিষ্ট রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পার্শপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন এক ঘটনা ঘটে নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েলর এক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে। টিকা গ্রহনের কয়েক ঘন্টা পরে ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পরে। অভিভাবকগন প্রথমে টিকাকে দায়ী মনে করলেও চিকিসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানান যে, মেয়েটি পূর্বের একটি রোগে ভোগছিলো। এইচপিভি টিকা গ্রহনের কয়েক ঘন্টা পরে ওই রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষার্থীসনহ তার অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পরেন। প্রকৃত পক্ষে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাটি মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে জানান চিকিৎসকরা।
এক গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন এবং প্রতি ১০০জন নারীর মধ্যে গড়ে ১১ জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী অথবা ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রেজিষ্ট্রেশনপূর্বক এ টিকা গ্রহণ করছেন। এছাড়া ৯ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুর মুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা গ্রহন করা এবং ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের অন্তত প্রতি ৩ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করার পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকগন।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার নারীর মৃত্যু হলেও, কেবল টিকাদানের মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টিকা হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই টিকা নেওয়া মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে বলে এক গবেষণার তথ্য মোতাবেক জানা গেছে।
উল্লেখ্য, দ্যা ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি), ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-এর সহায়াতায় সারাদেশের ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখেরও বেশি মেয়েকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টিকা প্রদানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।