উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারনে শেরপুরের সবকয়টি উপজেলা ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যা কবলিত হয় লাখো মানুষ। গৃহহীন ও গৃহবন্ধী হয়ে পরে অগণিত লোকজন। অনেকের প্রাণহানী ঘটে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বন্যা কবলিত জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন ও উদ্ধার কাজে অংশনিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। পাশাপাশি সহযোগিতার হাত নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এর অংশ হিসেবে সোমবার জেলার নকলা উপজেলাধীন ১নং গনপদ্দী, ২নং নকলা ও ৩নং উরফা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন ও পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়া পরিদর্শন ও উদ্ধার কাজের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে খাবার বিতরণ ও জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যগণ।
তথ্য মতে, ১৯ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপটেন সজিব-এর নেতৃত্বে সেনা সদস্যগণ সোমবার দিনব্যাপি উরফা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করেন। এছাড়া ৫ শতাধিক পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সহকারি কমিশনার (ভূমি) তামান্না হোরায়রা, ১৯ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপটেন সজিবসহ অন্যান্য সেনাসদস্যগন, উরফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরে আলম তালুকদার ভুট্টো, নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিন উপজেলার ১নং গনপদ্দী ডিজিটাল ইউনিয়ন ও ২নং নকলা ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝেও শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেন তারা। এসময় সংশ্লিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যানগনসহ নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দিনব্যাপি জেলার বন্যা কবলিত ৪টি উপজেলায় বন্যা দূর্গতদের উদ্ধার কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যগণ। তারা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৬টি বোটসহ লাইফ জ্যাকেট ও অন্যান্য উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে নিরলস উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এপর্যন্ত সেনাবাহিনী কর্তৃক বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ হতে ৩৬৯ জন পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার, ৩৪২ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৮০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।
১৯ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপটেন সজিব জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগনের কল্যাণে যেকোন সমস্যা মোকাবেলায় সদা তৎপর। তারা বন্যার্তদের পাশে আছেন এবং থাকবেন। দেশের যেকোন ক্রান্তিকালীন সময়ে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড দেশ-বিদেশে সমাদৃত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো জানান, বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর উপর ভরসা ও ধৈর্য ধারণ করা জরুরি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি।
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলমান রাখবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।