শেরপুরের নকলায় বিশ্ব নদী দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নকলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ও আয়োজনে এ সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঘনঘন লোডশেডিং ও অসহনীয় গরমের কারনে প্রেস ক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে ক্লাবটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য প্রথিতযশা সাংবাদিক মাহবুবর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক যায়যায়দিন’র প্রতিনিধি শফিউল আলম লাভলু, প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রিজন, সদস্য রেজাউল হাসান সাফিত, তরুন সাংবদিক হেলাল উদ্দিন বাবু ও গোলাম আহমেদ লিমন প্রমুখ।
এসময় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন ও মো. নূর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা, ভিডিও ক্রিয়েটর ও ভয়েজার তরুন সাংবদিক সাংবাদিক হাসান মিয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, নদ-নদী রক্ষায় একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তেমন কেন কিছু করার নাই। তবে নদ-নদী রক্ষা কতে হলে দেশের নদ-নদী দখল দুষণমুক্ত করা ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নদী আইন ভঙ্গ করে উজানে নদী শাষণ করে পানির ন্যায্য হিস্যার তোয়াক্কা না করেই বাঁধ নির্মাণ ও পানি সড়িয়ে নেয়ায় ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নদীগুলো অস্থিত্ব হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া অপ্রয়োজনে বাধের মুখ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যার কবলে ফেলার নজির প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে। এরফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয় অনিবার্য। তাই এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে দ্রুত আলোচনা করে একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজে বের করা এখনই সময়।
তারা আরো জানান, বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে ৫৭টি; এরমধ্যে ভারতের সাথেই ৫৪টি। এসব আন্তদেশীয় নদীর তালিকার বাইরেও অর্ধ শতাধিক নদ-নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহমান রয়েছে। তালিকায় না থাকায় এসব নদী দিন দিন তার অধিকার বা অস্থিত্ব হারিয়ে ফেলছে। ভাটির দেশ হচ্ছে পানি বঞ্চিত। ফলে আন্তসীমান্তীয় ও দেশের ভিতরের নদ-নদী গুলোর স্বীকৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উত্থাপনের মাধ্যমে ন্যায্য হিস্যার দাবি জানানো হয় এই সভায়।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যারা নদ-নদীর জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান বক্তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর নাব্যতা সৃষ্টি ও দুষণমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলা প্রতিও তারা জোর তাগিদ দেন।
বক্তারা জানান, দেশে যে হারে জনগন বাড়ছে, ঠিক সেই হারেই কমছে নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন জলাশয়। মানুষের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও বিভিন্ন ভবন তৈরী করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। ফলে জলাশয়ের পরিমাণ অস্বাভাবিক গতিতে কমতেছে। জলাশয় কমার সাথে সাথে কমছে অত্যাবশ্যকীয় মাছ, মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী। প্রকৃতি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তাই প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষা তথা সংরক্ষণ করার এখনই সময়। নতুবা এমন একদিন আসবে যেদিন প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া মৎস্য সম্পদ বলতে আর কিছু থাকবে না। প্রকৃতি ভুলে যাবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। হারিযে যাবে প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহ। এতেকরে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হবে খাদ্যশৃঙ্খল। যা মানুষসহ সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
জনগনের অসেচতনতার ফলে তৈরী হওয়া দীর্ঘ দিনের নদী দখলের মতো বিভিন্ন অব্যবস্থাপনাকে সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রক্ষায় তথা নদী রক্ষায় কাজ করলে দেশের সকল নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় দখল মুক্ত হবে। তবে নিজ নিজ এলাকার নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষায় সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান বক্তারা।
আশার বিষয় হলো, সরকার নদ-নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। বর্তমানে নদ-নদী রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে অন্তত ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা ও দখল রোধে প্রধান দায়িত্ব পালন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীপাড়ের বন্দরগুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। আর নদীর পানি দূষণ ঠেকানোর কাজে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নদী দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কাজ করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এছাড়া আরো বেশ কিছু দপ্তর ও বিভাগ এবং পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন নদী রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলেও বক্তারা জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘বিসি রিভারস ডে’ পালন দিয়ে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদীবিষয়ক আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলো দিনটি ‘নদী দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিসি রিভারস ডে পালনের সাফল্যের হাত ধরেই তা আন্তর্জাতিক রূপ পায়। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিন দিন বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত হচ্ছে। খুব দ্রুতই কোন একদিন আসবে যেদিন নাকি সারা বিশ্বের মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই দিবসটি যথাযথ মর্যার সহিত গুরুত্ব সহকারে পালন করবেন বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।