শেরপুর জেলার সদর উপজেলাধীন কামারিয়া ইউনিয়নের সুতিরপাড় এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর সরকারি আবাসনে রাতের আধারে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত ১০টার দিকে অর্ধশতাধিক পুরুষ এ হামলা করে।
এ ঘটনায় আতঙ্কিত হিজড়ারা প্রাণে বাঁচতে বুধবার মধ্যরাত থেকে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেয় এবং বৃহস্পতিবার দুপুরে কালেক্টরেট চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধন থেকে হিজড়ারা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক সুষ্ঠু বিচারের দাবীসহ নিরাপত্তার সাথে তাদেরকে পূণর্বাসনের দাবী জানিয়েছেন।
হামলায় হিজড়াদের মারপিট, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনিরুল হাসান আবাসনের হিজড়াদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিলে জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামী করে শেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরা তিন বছর ধরে সরকারের দেয়া আবাসনে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। হঠাৎ করে আমাদের বসতবাড়িতে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বসত ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি আমাদের এলোপাথাড়ি মারপিট করে। তাছাড়া মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই আমরা প্রাণ হারানোর ভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসে ডিসি স্যারের অফিসের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, আমরা কি অপরাধ করেছি? আমাদের ওপর কেন হামলা করা হলো? আমরা কী মানুষ না? স্বাধীন দেশে আমাদের কি শান্তিতে বসবাসের অধিকার নেই? আমাদের উপর বর্বর হামলা, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও ভাংচুরকারীদের সঠিক বিচারের দাবীতে আমরা থানায় মামলা করেছি। সুষ্ঠু বিচার দাবীতে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস এই ন্যাক্কার জনক কর্মকান্ডর সাথে জড়িতদের সঠিক বিচার করা হবে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভখারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হিজড়াদের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনিরুল হাসান বলেন, ঘটনার বিষয়ে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ কর্মকর্তাগন হিজড়াদের আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। আমি তাদেরকে একটি মামলা দায়েরের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বছর আগে হিজড়াদের জন্য বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসন। শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের চকআন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় প্রায় ২ একর সরকারি জমিতে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। সেখানে ৪০ জন হিজড়াকে পূণর্বাসিত করা হয়েছে।