ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান হাসিব সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনায় গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি সকল এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রিয় বন্ধু সম্বোধন করে বলেন, ‘প্রিয় এসএসসি ২০২৪ উত্তীর্ণ বন্ধুরা তোমাদের জানাই পুষ্পিত অভিবাদন। ইতোমধ্যে শিক্ষাজীবনের বড় একটা পথ পাড়ি দিয়েছো তোমরা। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতের দীর্ঘ একটা পথ। যে পথ অবারিত, মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় ডানা মেলে উড়বার পথ।
উচ্চশিক্ষার সে বিস্তৃত অন্তরীক্ষে পৌঁছতে হলে তোমাকে সফলভাবে পাড়ি দিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকের একটা ছোট্ট বাঁধা। এজন্য এই মুহুর্তে তোমার জন্য দরকার সঠিক গাইড লাইন। কেননা পরিবেশ পরিস্থিতির কারনেও অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এসএসসি’র স্তর অতিক্রমের পরেও ঝরে যায়; আর ঝরে যাওয়ার অনেক কারনের মধ্যে সঠিক গাইডলাইন ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দূরদর্শিতার অভাবকে দায়ী করা যেতে পারে। তাইতো তোমাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের কথা ভেবে আমার অবস্থান থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
আমার পরামর্শ গুলো হতে পারে তোমার জীবনের জন্য পাথেয় স্বরূপ। পরামর্শ গুলো হলো-
প্রথমত হলো জীবনের লক্ষ্য স্থির করা। তোমাকে এখনই লক্ষ্য স্থির করতে হবে। ঠিক করতে হবে তোমার ভিশন। ভবিষ্যতে কী হতে চাও, কোন গন্তব্যে পৌঁছতে চাও তা এখনই নির্ধারণ করে নাও।
দ্বিতীয়ত হলো বিভাগ বা শাখা নির্বাচন করা। এ ক্ষেত্রে তোমাকে চিহ্নিত করে নিতে হবে তোমার গ্রহন শক্তি বা সামর্থ ও দুর্বলতা সমূহ। আশা করি, ইতোমধ্যে তুমি জেনে গেছো জ্ঞানের কোন শাখায় তুমি পারদর্শী এবং কোন শাখায় অপেক্ষাকৃত দূর্বল। যদি মনে করো, গণিত বা বিজ্ঞান তোমাকে আনন্দ দেয় তাহলেই কেবল বিজ্ঞান শাখাটি তোমার জন্য অধিক প্রযোজ্য। আর যদি মনে করো, এগুলোর চেয়ে বাংলা বা ইতিহাস বা অন্যান্য বিষয় সমূহ তোমাকে বেশি টানে তাহলে মানবিক শাখা হতে পারে তোমার জন্য সেরা অপশন। আত্মীয় স্বজনের কথায় কান না দিয়ে নিজের নিজের মনের ডাকে সাড়া দেওয়া হবে জ্ঞানীর কাজ। শুনো- অবশ্যই নিজের শক্তি বা সামর্থ ও দুর্বলতার জায়গাটা চিহ্নিত করে তবেই বিভাগ নির্বাচন করবে কিন্তু।
তৃতীয়ত পরিবেশ পরিস্থতির সাথে খাপ খাইয়ে কলেজ পছন্দক্রম নির্বাচন করা। এ সময়টায় তোমরা সবচেয়ে বেশি যেখানে বিভ্রান্ত হও তা হচ্ছে কলেজ পছন্দক্রম নির্বাচনে। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে কলেজ মনোনয়ন দেওয়ায় অনেক সময় তোমার পছন্দের কলেজে পড়ার সুযোগ নাও আসতে পারে। এ কারণে নটরডেম, হলিক্রস কিংবা সিভিল এভিয়েশনের মতো ঢাকার স্বনামধন্য কলেজগুলো থাকতে পারে তোমার পছন্দক্রমের শীর্ষে।
পরামর্শের চতুর্থ স্তরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা স্মার্টফোন হতে যথাসম্ভব দূরে থাকা। যদিও স্মার্ট যুগে এসে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে স্মার্ট ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস সমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্মার্ট ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের কারেই তরুণ শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে। তোমাদের মতো বয়সে স্মার্ট ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার শিক্ষার্থীদের জীবনে ইতিবাচক যাকিছু দিবে, সেতুলনায় কেড়ে নেয় বা নিবে অনেক বেশি, প্রভাব ফেলবে নেতিবাচক অনেক কিছুতে। তাই ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়’ কথাটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখন তোমরা স্মার্ট ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস থেকে যত দূরে থাকবে, বছর দুয়েক পর তোমার জীবনের পথ ঠিক ততটাই মসৃণ হবে।
পঞ্চম পরামর্শে থাকছে ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধ বজায় রাখা। তুমি যে ধর্মেরই হও না কেনো অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন তোমাকে মানবিক করে গড়ে তুলবে, তোমার মনকে শীতল রাখবে। তোমার ভবিষ্যত সফলতার জন্য সর্বক্ষণ একটি সুন্দর মনের অধিকারী থাকা অন্যতম পূর্ব শর্ত।
সর্বোপরি, তোমাদের ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করি। একদিন তোমরাই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহন করে দেশকে নেতৃত্ব দিবে। একই সাথে মা-বাবা ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। তোমাদের হাত ধরেই দেশ জাতি সামনের দিকে এগিয়ে চলবে। আমরা হবো গর্বিত বাঙালি। এই প্রত্যাশা করছি। সবার জন্য নিরন্তর দোয়া ও অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো।
–হাসিবুল হাসান হাসিব
সাবেক শিক্ষার্থী
বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।