শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের নব দিগন্ত একাডেমীর শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। ঈর্ষণীয় ফলাফলে এলাকায় যেন খুশির বন্যা বইছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীন নব দিগন্ত একাডেমি হতে এসএসসি পরীক্ষায় ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ জিপিএ ৫ অর্জন করে।
এই আনন্দ এলাকাবাসীর সাথে ভাগাভাগি করতে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিবারের উদ্যোগে ও নব দিগন্ত একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিজানুর রহমান-এঁর সভাপতিত্বে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এসময় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থী সাবিহা সুলতানা রিহা, রিফাত ইবনে অপূর্ব, সাফিয়া আক্তার ফিমা, নাজমুল হাসান, নুসরাত জাহান আলো, আবির হাসান উল্লাস, তানিয়া আক্তার, তায়্যিবা জান্নাত, রাসেল আহমেদ, জেবা রাইসা, আফিয়া আক্তার শ্রাবন্তী, হিমি আক্তার ও সাজেদা আক্তারসহ একাডেমী পরিচালনা পরিষদের সদস্য মজিবর রহমান ও নূর ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোঃ লতিফুর রহমান, সহকারী পরিচালক খন্দকার আব্দুর সায়েদ, মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষক খন্দকার আব্দুস সবুর রনি ও মজিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা খন্দকার সারোয়ার জাহান নিঝুম, নকলা প্রেস ক্লাবের সদস্য রেজাউল হাসান সাফিত ও তরুণ সাংবাদিক হাসান মিয়া, কৃতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকগন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বাবা-মা ও শিক্ষকদের একান্ত প্রচেষ্ঠা ও আমাদের চেষ্ঠার ফলেই ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আমাদের ফলাফলে বাবা-মা ও শিক্ষকগন খুশি করতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। মানুষের মতো মানুষ হতে সকলের কাছে দোয়া কমনা করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
একাডেমীর পরিচালক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, নব দিগন্ত একাডেমীর প্রিয় শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় ঐতিহাসিক ফলাফল অর্জন করায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। রাজধানী ঢাকার বিলাসী জীবন রেখে গ্রামে এসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার সফল চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে মিজানুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
জাান গেছে, শেরপুর সদর উপজেলা ও নকলা উপজেলার সীমান্তবর্তী বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের ভূরদী খন্দকার পাড়া গ্রামে যখন চোখে পড়ার মত আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। তাই ভালো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষার্থী প্রচুর টাকা ব্যয়ে দূরের কোন বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতো। অনেক সময় শিশু শিক্ষার্থীরা দূরে যেতে চায়না। তাই শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া ওই গ্রামের হত দরিদ্র শিশুর লেখা পড়ার সুবিধার্থে নিজ গ্রামের পুরো জমিতে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নব দিগন্ত একাডেমী’ নামে একটি জুনিয়র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মিজানুর রহমান। পরে পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উন্নিত করা হয়েছে। মিজানুর রহমান প্রথমে জনতা ব্যাংকে, পরে ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় অবসরে যান। তাঁর ২ ছেলে-মেয়ের মধ্যে, ছেলে আসিফ শাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভলপম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার হিসাবে এবং মেয়ে তানজিনা মিজান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অফিসার হিসাবে নিয়োজিত আছেন। কর্মের তাগিদে তাঁরা ঢাকাতেই থাকেন। স্ত্রী হারা হয়ে মিজানুর রহমান সকল আরাম আয়েশ ভুলে, রাজধানী ঢাকাস্থ নিজের বাসা ছেড়ে শিক্ষার আলো ছড়াতে ছুটে আসেন নিজের গ্রামে। এখানে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি একজন সফল শিক্ষানুরাগী হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পারিণত হয়ে উঠেন। তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো শিক্ষানুরাগীর অনুকরণীয় হিসেবে। মিজানুর রহমানের মত সারাদেশে এমন ভালো মনের এবং ভালো মানের ত্যাগী ও নির্লোভ মানুষ গড়ে উঠুক এমনটাই আশা সর্র্বসাধারনের।