৯ মে, ২০২৪ খ্রি. বৃহস্পতিবার; বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর জ্যেষ্ঠ জামাতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক গবেষণাধর্মী সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া (সুধা মিয়া)-এঁর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত রোগে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ৯ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলাস্থ বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের অফিস কক্ষে স্মৃতিচারন মূলক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বিদ্যুতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি মনসুর আলী, সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, সাবেক দপ্তর সম্পাদক খোরশেদ আলম শ্যামল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ আলী প্রমুখ।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে জানান, এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেহপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্তÍ মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। মরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুন নেছা বিবির সন্তান ওয়াজেদ মিয়াকে সবাই ‘সুধা মিয়া’ নামেই ডাকতেন ও চিনতেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু।
১৯৫৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের স্মাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ সম্পন্ন শেষে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন মেধাবী ছাত্র এম এ ওয়াজেদ মিয়া।
পুরো উপমহাদেশে প্রথম শ্রেণির এই বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরে আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্বচ্ছ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগে যোগদেন। ১৯৬১-১৯৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভি.পি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।
আজন্ম সৎ ও নিভৃতচারী এই বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যকান্ডের সময় ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থাকায় তাঁরাও প্রাণে বেঁচে যান।
ব্যক্তি জীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্থ এই বিজ্ঞানীর দুই সন্তান (এক ছেলে ও এক মেয়ে)। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮টায় প্রথম সন্তানের (তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের) জন্ম। একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল, তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর জামাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে কখনো ক্ষমতার কাছাকাছি দেখা যায়নি বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।
এসময় বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও নকলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিক রেজাউর হাসান সাফিত ও তরুণ সাংবাদিক ও স্মার্ট ভিডিও এডিটর হাসান মিয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মপ্রিয়, নির্লোভ, সৎ এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখা এবং নকলা প্রেস ক্লাবের মতো দেশের অগণিত সংগঠন দোয়া মাহফিল, মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।