শেরপুরের নকলায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষ্যে নকলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আলোচনা সভা করা হয়েছে। ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবেলায় সাংবাদিকতা’-এ প্রতিপাদ্য ধারন করে শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় নকলা প্রেস ক্লাবের অফিস কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্লাবটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এঁর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর হোসেন-এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন ও দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা প্রমুখ।
বক্তারা তাদের বক্তেব্যের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। উদ্বেগের সহিত তাঁরা বলেন, দেশে যে হারে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে, তুলনা মূলক ভাবে সেই হারেই ভয়হীন স্বাধীন সাংবাদিকতা কমছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) নামক সংস্থার তথ্যের বরাতে বক্তারা জানান, ২০০২ সাল থেকে সংস্থাটি প্রতি বছর ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করে। আরএসএফ কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ একধাপ পিছিয়ে ১৬৩তম অবস্থানে দাঁড়ায়। গত বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৫ দশমিক ৩১।
তাঁরা জানান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সব ধরনের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। সরকারকে সংবিধান মেনেই তথা তাদের ক্ষমতানুযায়ী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত মুক্ত, স্বাধীন ও বহুমুখী প্রচার মাধ্যমগুলোকে ও বস্তুনিষ্ঠ লেখকগনকে বরাবরের ন্যায় সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি নিজ নিজ অবস্থানে রেখেই দেশ ও জাতির কল্যাণে উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে জড়িত রাখার আহ্বান জানান বক্তারা। সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম কর্মীরা তার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহনের আহবান জানান তাঁরা।
তবে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে খ্যাত গণমাধ্যম যাতে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে বিনা বাধায় বা বিনা প্রতিবন্ধকতায় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করতে পারে; এমন সুব্যবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তাঁরা। পরিবেশ-প্রকৃতি জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর ও সব ধরনের দূষণের বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নীতি নির্ধারণী মহলের নজরে আনার আহ্বান জানান সাংবাদিক নেতারা। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অপঘাতে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মামলা, হামলাসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
এসময় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-আমিন, প্রচার সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রিজন, সদস্য মোশাররফ হোসেন শ্যামল, রেজাউল হাসান সাফিত, সুজন মিয়া ও রাইসুল ইসলাম রিফাতসহ তরুণ সাংবাদিক ভিডিও এডিটর হাসান মিয়া ও সাংবাদিক লিমন আহম্মেদসহ অন্যান্য সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবছর দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করে আসছেন। হিসেব মতে ২০২৪ সালের এই দিনটি বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩১ বছর পূর্তি হলো।