শেরপুরের নকলা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জোড়ালো দাবী উঠেছে। উপজেলার প্রথম ও একমাত্র ইংরেজী মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যাপীঠ ‘পাঠশালা’ এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম রাসেল, নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সদ্যসাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইনসহ উপজেলার বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার চিঠিপত্র বা মতামত প্রকাশের অংশে লেখালেখির মাধ্যমে এবং সর্ববৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তাদের এই দাবীটি তুলে ধরেন।
মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম রাসেল তাঁর ফেইসবুক টাইম লাইনে আক্ষেপ করে অনেককে দায়ী করে মনের কথাগুলো প্রকাশ করেন এই ভাবে- ‘শেরপুর জেলার নকলা খুব সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র উপজেলা যেখানে উপজেলা সদরে কোন পূর্নাঙ্গ শহীদ মিনার নাই; এবং এই না থাকা নিয়ে এই উপজেলার প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সুশীল বা দায়িত্বশীল কোন পক্ষেরই কেনজানি মাথাব্যথা নাই। এই একটি বিষয় নিয়ে বছরের পর বছর কথা বলতে বলতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে! কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে যাদের কাজটি করার কথা তাঁরা কেনজানি আমলে নিচ্ছেন না। তবুও আমি আমার অবস্থান থেকে দাবী করেই যাব। ‘অবিলম্বে নকলা উপজেলা সদরে তথা সম্ভব হলে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জোড়ালো দাবী জানাচ্ছি।’
তার পোস্টের দ্বিতীয় প্যারাতে তিনি মনের দুঃখে আরো বলেন ‘আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে প্রার্থী দ্রুততম সময়ে নকলা উপজেলা শহরে শহীদ মিনার নির্মাণের নিশ্চয়তা দেবেন আমার ভোট তার পক্ষেই হবে। আর যদি কোন প্রার্থী এই প্রতিশ্রুতি না দেন তাহলে আমার ভোট আমার কাছেই থাকবে।’
নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সদ্যসাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইন বলেন ‘আমি ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পুর্তির বছর তথা ২০০২ সালে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার চিঠিপত্র বা মতামত প্রকাশের অংশে নকলা উপিজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবী জানিয়ে ছিলাম। এর পরে প্রায় একযুগ অপেক্ষা করে ২০১৭ সালে পুনরায় পত্রিকার মাধ্যমে দাবী জানাই। এরপর থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমার দাবীটি সংশ্লিষ্টদের বা দায়িত্বশীলদের নজরে আনতে আমার অবস্থান থেকে দাবী জানিয়ে আসছি। যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রিয় নকলা শহরে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমার দাবী চলমান থাকবে।’
শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে অনেকে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা গুলোর মধ্যে নকলা উপজেলাটি রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও বিভিন্ন কারনে ভিআইপি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা জরুরি। তাঁরা বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। অথচ দেশের প্রায় সব জেলা ও উপজেলা শহরে শহীদ মিনার বা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ থাকলেও অজ্ঞাত কারনে ভিআইপি নকলা শহরে কোন স্বতন্ত্র শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। ভাষা সৈনিকসহ ওই আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রায় সবাই পরপারে চলেগেছেন। ফলে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বই পড়া ও শহীদ মিনার সম্পর্কে জানা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, সরকার দলীয় রাজনৈতিক সংগঠন ও বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের সহযোগিতায় নকলা পরিষদ চত্ত্বরে স্থায়ীভাবে একটি শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবীটি যৌক্তিক বলে সর্বসাধারণ মনে করছেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন অনেকে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন ‘যেহেতু আজ পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর বা এর আশেপাশে সুবিধাজনক স্থানে একটি শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। সেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নকলা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে বা সুবিধাজনক স্থানে দৃষ্টিনন্দন একটি শহীদ মিনার অথবা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা এখন সময়ের দাবি। অতএব উত্থাপিত দাবীটি যৌক্তিক এবং বাঙালি জাতি হিসেবে এমন দাবী উপজেলাবাসী সকলেই করতে পারেন বলে তিনি মনে করছেন। তিনি আরো বলেন ‘উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর বা আশেপাশে সুবিধাজনক স্থানে একটি শহীদ মিনার অথবা একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। আমরা চাইলেই একটি শহীদ মিনার অথবা একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে পারবনা। মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন একটি শহীদ মিনার অথবা মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হলে বেশ অর্থের প্রয়োজন পড়বে। তাই অর্থের যোগান পাওয়া জরুরি। তবে চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরে উপজেলার দায়িত্বশীল সবাইকে নিয়ে বসে প্রয়োজনে অফিসিয়ালী একটা সভার মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দপ্তরে প্রস্তাব পাঠাবেন বলে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান।