বিশ্ব বই দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় সংগঠনটির অফিস কক্ষে ‘রিড ইওর ওয়ে’ প্রতিপাদ্যকে ধারন করে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান বিশ্বের শতাধিক দেশে ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর ইউনেসকো একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ঘোষণা করে। এবছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘রিড ইওর ওয়ে’। বই পড়ার মাধ্যমে মহান স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখা এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ-এঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ’র ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য তৌহিদুর রহমান ডালিম প্রমুখ।
বক্তারা জানান, প্রযুক্তির দাপটে প্রিন্ট বই পড়ার অভ্যাস ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বই হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দেওয়া, বইয়ের কাহিনির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা ও ক্রমশ গল্পের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার মতো অনুভূতিগুলোর সামনে আজকাল সবকিছুই যেন তুচ্ছ।
তারা আরো জানান- বই পড়া, বইয়ের মুদ্রণ ও বইয়ের স্বত্বাধিকারের বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্যেই ১৯৯৫ সাল থেকে ২৩ এপ্রিল ‘বিশ্ব বই দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। ১৯৯৫ সালে থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্ব বই দিবস এবং কপিরাইট দিবস’ পালন করা হয়ে আসলেও, বিশ্ব বই দিবসের ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেস’র কাছ থেকে।
তথ্য মতে, স্পেনের একজন বিখ্যাত লেখক, মিগেল দে থের্ভান্তেস ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান। লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেস ছিলেন মিগেল দে থের্ভান্তেস এর একজন ভক্ত। ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেস তার প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশে ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল স্পেনে বিশ্ব বই দিবস পালন করা শুরু করেন। তবে এই দিনটি বিশ্ব বই দিবস হিসেবে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কোর কাছ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়।
বক্তারা বলেন- শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনি মস্তিষ্ককে সুস্থ, কার্যক্ষম ও সচল রাখার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়া প্রয়োজন। মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী ও কার্যকর হলো বই পড়ার অভ্যাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিএলএ সেন্টার ফর ডিসলেক্সিয়ার ডিরেক্টরের বরাতে বক্তারা জানা, ‘ভাষা শেখা কিংবা কোন কিছু লেখার চাইতেও বই পড়ার সময় একজন পড়ুয়া অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করেন। যা তাকে কাল্পনিক জগতে বিস্তৃতভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়, চিন্তার নতুন অনেক দ্বার খুলে দেয়। এতে করে ভাষা শেখার চাইতেও অনেক বেশি উপকৃত হয় মস্তিষ্ক’। বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় বলে তারা মন্তব্য করেন। বিশ্বায়নের এই যুগে মেধাবী প্রজন্ম এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার মূল উপাদান হচ্ছে বই এবং চর্চার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে পাঠাভ্যাস। বিশ্ব বই দিবস বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন বলে তাঁরা দাবী করেন।
বক্তারা জানান, নিজেকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মস্তিষ্কের সুস্থতার ক্ষেত্রে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। বই কিনতে, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে, অন্যকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহী করে তুলতে এমনকি উপহার হিসেবে বইকে অধিক গুরুত্ব দিতে সকলের প্রতি তারা আহবান জাননা। বিশেষ করে বই পড়ার মাধ্যমে মহান স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে ও জানাতে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ সম্পার্কিত বই পড়ার প্রতি তাগিদ দেন তাঁরা।
এসময় সুলতান মাহমুদ, নাজমুল ইসলাম, খোরশেদ আলম শ্যামল, শাকিল মুরাদসহ বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং নকলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা ও প্রচার সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রিজনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।