বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, জিল বাংলা সাহিত্য পুরষ্কার প্রাপ্ত লেখক, নকলা উপজেলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শেরপুর ও নকলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য, বিভিন্ন সাহিত্য কবি লেখক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপদেষ্টা, কবি সংঘ বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট কবি কলামিস্ট তালাত মাহমুদ-এঁর মৃত্যুতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিশেষ করে শেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে এক অপূরনীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে শেরপুরের নকলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রথিতযশা সাংবাদিক সদ্য প্রয়াত তালাত মাহমুদ-এঁর স্মরণে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন- তালাত মাহমুদ ছিলেন বহুমুখি প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের প্রায় সব জায়গাতেই তার বিচরণ ছিল। প্রেম ও সৌন্দর্যের পাশাপাশি তার কবিতায় উঠে এসেছে চেতনা, দ্রোহ ও মানবিকতা। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের পাশাপাশি একজন সফল সংগঠক ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি শেরপুর ও জামালপুরের কবি-সাহিত্যিকদের সংঘবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। বক্তারা জানান, তালাত মাহমুদ একসময় রাজধানী ঢাকাসহ ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরব বিচরণ করলেও নাড়ির টানে চলে এসেছিলেন শেরপুরে। অথচ তার মতো একজন লেখক-সাংবাদিক ঢাকায় রয়ে গেলে তিনি অনেক উচ্চাসনে থাকতেন। কাজেই তার মৃত্যুতে শেরপুর-জামালপুর অঞ্চলের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। স্মরণসভায় তালাত মাহমুদ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা জানান, বিগত শতাব্দীর আশির দশকের আলোড়নসৃষ্টিকারী কবি সাংবাদিক ও কলামিস্ট তালাত মাহমুদ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট শেরপুরের চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বাছুরআলগা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচণ্ড সাংগঠনিক কর্মক্ষমতার অধিকারী ও ক্ষুরধার লেখনীর আপোসহীন কলমসৈনিক তালাত মাহমুদ ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পাশ করার পর একইসাথে এলএলবি ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। তার পিতা মনিরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তালাত মাহমুদ জাতীয় লেখক কবি শিল্পী সংগঠন ‘লেকশি’ এবং ‘কবি সংঘ বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় সাড়াজাগানো ‘জিলবাংলা সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তার প্রথম গ্রন্থ ‘স্বর্গের দ্বারে মর্তের চিঠি’ ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। নীলকন্ঠ কবি তালাত মাহমুদ সাপ্তাহিক জামালপুর বার্তার প্রথম বার্তা সম্পাদক, দৈনিক দেশবাংলার সম্পাদনা পরিষদ সদস্য, আজকের বাংলাদেশের সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সফিয়ার সম্পাদক (অর্পিত দায়িত্ব), বিলুপ্ত সাপ্তাহিক জনকন্ঠ’র প্রধান সহকারি সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা রিপোর্ট-এর প্রধান সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক পূর্বকথা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক ঝিনাই-এর উপদেষ্টা সম্পাদক, পল্লীকন্ঠ প্রতিদিনেব সহযোগী সম্পাদকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ইত্তেফাক, ইনকিলাব, জাহান, সচেতনকন্ঠ, দশকাহনীয়া, কালের ডাক, পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন, ভোরের আলো, শ্যামলবাংলা ২৪ ডটকম, শেরপুর টাইমস ডট কম, বাংলার কাগজ, আজকের পত্রিকা, ভোরের আকাশসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সাহিত্য দর্পণ’ (১৯৭৩-১৯৮৬) ও ‘আমরা তোমারই সন্তান’ (১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকাশিত)। তালাত মাহমুদ মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি কবি সংঘ বাংলাদেশ-এর সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টের সহযোগী সম্পাদক, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো বলে অনেকে মনে করছেন।
নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইন-এঁর সভাপতিত্বে ও প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সদস্য খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান সুজা, উপজলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনসুর, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ ও প্রয়াত তালাত মাহমুদের একমাত্র পুত্র তানসেন মাহমুদ ইলহাম প্রমুখ।
তারা সবাই আলাদা ভাবে শোক প্রকাশের পাশাপাশি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এছাড়া মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তারা। সদ্য প্রয়াত তালাত মাহমুদ-এঁর জীবনাদর্শের উপর আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এসময় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.কে.এম মাহবুবুল আলাম সোহাগ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইসহাক আলী, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছামিউল হক মুক্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক হীরা ও আব্দুর রশিদ সরকারসহ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দফতর প্রধানগন, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, নকলা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, নকলা ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগন, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীসহ প্রয়াত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।