মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন

তীব্র শীতে কাবু নকলার নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনযাত্রা ব্যাহত

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১১১ বার পঠিত

পৌষের শেষদিকে এসে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলেও হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। শীতের দাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অস্বাভাবিক হারে কমেছে। প্রায় প্রতি রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। দিনের মধ্য ভাগ তথা দুপুর পর্যন্ত দেখা মিলছেনা সূর্যের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকেল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হতে থাকে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন কৃষি শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধসহ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বেড়েছে। শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা আলু, সরিষা, ভুট্টা, গম খেতে কাজ করছেন। গ্রাম এলাকায় মাঝে মধ্যেই খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় দরিদ্র মানুষজনকে।

কনকনে শীতে ঠান্ডা পানি ও কাদায় নেমে বোরো ধানের চারা রোপণ এবং বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা ও খেত তৈরির কাজে খুবই কঠিন সম্যয় পার করতে হচ্ছে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের। প্রতিনিয়ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।

আবহাওয়ার বৈরি পরিস্থিতির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো বীজতলা। বিভিন্ন এলাকার বীজতলার ধানের চারা লালচে-হলুদ হয়ে যাচ্ছে, সঠিক ভাবে বোরো আবাদ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন জানিয়েছেন, এখনো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, এরকম আবহাওয়া আরো কিছু দিন স্থায়ী থাকলে কিছু কিছু বীজতলার ধানের চারা নষ্ট হতে পারে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের করনীয় বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার অস্বাভাবিক হারে কমেছে। এবষিয়ে বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার শহিদুল ইসলাম জানান, নকলার প্রতিটি গ্রামে শীতের তীব্রতা বাড়ার কারনে স্বাভাবিকের চেয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমেছে। কোন কোন অভিভাবক শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু শিক্ষার্থী ঠান্ডার কারনে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে চাচ্ছেনা। তাই আপাতত উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষনা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, ঠান্ডায় শিক্ষার্থীরাও কাবু হয়ে যায়। প্রমান স্বরূপ জানান, সপ্তম শেণীতে ক্লাস নেওয়ার সময় দলীয় কাজ দিলে ছেলেরা হঠাৎ বলে উঠে- স্যার হাত দিয়ে কলম ধরতে পারতেছিনা। একটু সময় দেন হাতে তাপ লাগিয়ে আসি। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারনত খোলামেলা স্থানে স্থাপিত হওয়ায় শ্রেণীকক্ষে বাতাস ও কুয়াশা প্রবেশ সহজ। তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শীতে কাবু হওয়া শিক্ষার্থীরা ছিড়াফাটা কাগজ বা খড়কুটা দিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায়।

ঠান্ডার কারণে অতিজরুরি ছাড়া লোকজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। ফলে রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা চালকরা যাত্রীর অভাবে ভাড়া কম পাচ্ছেন। এতে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এদিকে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত মাসের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, নকলা হাসপাতালে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগি বাড়লেও মারাত্মক কোন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি। বড় ধরনের কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম স্যারের পরামর্শক্রমে নকলা উপজেলার প্রতিটি গুচ্ছ গ্রামে ও সরকারের উপহার দেওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের হাতে হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দরিদ্র শীতার্তদের শীত নিবারনের জন্য এলাকা ঘুরে ঘুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ কাজ চলমান আছে বলেও ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়া কমবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।