দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার বই ও সিলেবাস প্রায় একই। সংযুক্ত মাদ্রাসা গুলোতে ইবতেদায়ী (প্রাথমিক স্তর) রয়েছে। দাখিল মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজ) ও আলিম স্তরের মাদ্রাসা সমূহ একই ও সমমানের। এমনকি দ্বাদশ স্তরের কলেজ ও ফাজিল স্তরের মাদ্রাসা সমূহ সমমান। অথচ ২০২৩ সালের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির ক্ষেত্রে বিস্তর বৈষম্য করা হয়েছিলো।
শিক্ষকগনের বেতন ভাতা ও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা একই থাকলেও, ২০২৩ সালের জন্য প্রকাশিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটি ভোগ করছে ৭১ দিন, মাধ্যমিক স্তরের স্কুল গুলোতে ছুটি ভোগ করছে ৭৬ দিন, সকল স্তরের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ছুটি ভোগ করছে মাত্র ৬৩ দিন। অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সংযুক্ত মাদ্রাসা গুলোতে ইবতেদায়ী তথা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ছুটিতেও বৈষম্য ছিলো লক্ষণীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা ছুটি ভোগ করছে মাত্র ৫৪ দিন; কিন্তু মাদ্রাসার শিশুরা ছুটি ভোগ করছে ৬৩ দিন।
একই এলাকার শিক্ষার্থীদের কেউ স্কুলে পড়ে, কেউবা আবার মাদ্রাসাতে পড়ে। কেউ পড়ে কলেজে, আবার কেউ পড়ে মাদ্রাসায়। কিন্তু ছুটির তালিকা অনুযায়ী কারো ছুটি শুরু, অন্যদিকে কারো ছুটি শেষ হয়ে যায়। ছুটির ভিন্নতা থাকায় বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার স্বার্থে বা এক সাথে ছুটি ভোগ করার জন্য শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বাবা-মা একই স্তরে বা একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না, এমন নজির অগণিত। দেখা যায়, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী তথা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। যেমন- তাদের একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অন্যজন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক; কেউ স্কুলে, কেউবা মাদ্রাসায় চাকরি করেন। এক্ষেত্রে তাদের ছুটির ভিন্নতার কারনে ছুটি ভোগ করতে শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে কিংবা সময় কাটাতে চাইলে কোনোক্রমেই তা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পরিবারের এক সন্তান যদি প্রাথমিক স্কুলে বা ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় পড়ে; অন্য এক সন্তান যদি মাধ্যমিক স্তরে বা দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে; কোন সন্তান যদি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মাদ্রাসায় কিংবা কলেজে পড়ে; সেইক্ষেত্রে বিভিন্ন লম্বা ছুটিতেও শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিনোদনের উদ্দেশ্যে কোথাও বেড়াতে যাওয়া ভিন্ন তারিখে ছুটির কারনে তা অসম্ভব ছিল।
পরিবারের সবাই মিলে অন্তত গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন ও ধর্মীয় ছুটির আনন্দ উদযাপন করার জন্য দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২০২৪ সালের জন্য অভিন্ন ছুটির তালিকা হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন অভিভাবকসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুশীলজন। তাতে করে বাবা-মাসহ শিক্ষার্থীরা তাদের ছুটিগুলো সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবে। ফলে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে অন্তত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী ও সংযুক্ত মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কলেজ ও মাদ্রাসা সমূহের একাডেমিক ছুটির তালিকা ২০২৪ সাল থেকে অভিন্ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক:
শিক্ষক ও সাংবাদিক;
সভাপতি, নকলা প্রেসক্লাব, শেরপুর।
E-mail: musharaf9ab@gmail.com