শেরপুরের নকলায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নকলা হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সকাল ১০টার সময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে থেকে র্যালিটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক পতাকা উত্তোলন করা হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন-এঁর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন এবং মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর প্রমুখ।
এসময় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, বাংলাদেশ পুলিশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক কমান্ডার স্মৃতি সংসদের নেতৃবৃন্দসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগন, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংবাদিকগন, বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য মতে, ১৯৭১ সালের এই দিনে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সীমান্ত জেলা শেরপুরের নকলা অঞ্চলকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করেছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতারিত করে যুদ্ধকালীন ১১নং সেক্টরের আওতায় থাকা নকলা অঞ্চলকে হানাদার মুক্ত করে বিজয়ের পতাকা উড়ান তাঁরা।
মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে ১১নং সেক্টরের তথা ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে পাকবাহিনীর হেড কোয়াটার আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মেজর রিয়াজ। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর গুরুদায়িত্বে ছিলেন এম. হামিদুল্লাহ এবং ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল আবু তাহের। হানাদার বাহিনীর মূল টার্গেটে থাকা নকলাতে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে গৃহহীন করেছিল অগণিত মানুষকে। হত্যা করেছিল মুক্তিকামী যুবকদের। শহীদ হয়েছিলেন ১৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবুও মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় বানাজিৎ শিং ত্যাগী ও ব্রিগেডিয়ার সানাতন শিং এর উদ্যোগে এবং কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে টু-আইসি আব্দুর রশিদ ও সিকিউরিটি কর্মকর্তা একলিম শাহ্সহ ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ যুদ্ধে অংশনেন। হানাদাররা পিছু হটলেও ১৩০ জন এদেশীয় দোসর তথা বদররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। এর পরের দিন ১১৭ জন রাজাকার-বদর ১১০টি অস্ত্রসহ কোম্পানী কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পন করে। ওইদিন সকাল ১১টায় নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বর্তমানে সরকারি) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলণ করা হয়।