আগামী ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি. রোজ রোববার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে (তফসিল ঘোষণাকালে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ তারিখ ঘোষণা করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে শেরপুরের নকলায় আনন্দ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকগন।
বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পর পরই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ-এঁর নেতৃত্বে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আনন্দ মিছিলটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহ প্রদক্ষিণ করে নকলা শহরের উত্তর বাজারে সংক্ষিপ্ত পথসভা করা হয়।
সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের আলোকে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে। তাঁরা বলেন, নকলা-নালিতাবাড়ী আওয়ামী লীগের ঘাটি; আর এই এলাকার উন্নয়নের রূপকার ও জনগনকে নিরাপদে রেখেছেন মহান জাতীয় সংসদের উপনেতা সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। অতএব এই আসনে নির্বাচনের জন্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর বিকল্প নেই। আগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান বক্তারা।
এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে থেকে নৌকার পক্ষে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করার পাশাপাশি পৌরশহরের সুবিধা জনক কোনস্থানে পথসভা আয়োজন করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জামাত-বিএনপির অবরোধের নামে নাশকতা প্রতিরোধে উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে রাজপথে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তাছাড়া সাধারণ জনগনের কাছে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন সমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
এসময় উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ ও অন্যান্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামী লীগের অগণিত কর্মী-সমর্থকগন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র গ্রহন ও দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তির শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। আর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। সবশেষে ৭ জানুয়ারি (রোববার) সারাদেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহন মূলক, অবাধ, নিরেপেক্ষ ও সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন যথাযথ কর্তৃপক্ষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরের পাঁচ বছর। এই হিসেবে মতে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। অতএব একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ২২ দিন আগেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও বাড়তে পারে। আর এবারের নির্বাচনে ভোটের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৭ মার্চ। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২ মার্চ এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল একই বছরের ৭ মে। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সপ্তম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৭ এপ্রিল এবং আর ভোটগ্রহণ হয়েছিল ওই বছর ১২ জুন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০০১ সালের ১৯ আগস্ট এবং আর ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১ অক্টোবর। নবম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। চলমান তথা একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলো ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর বুধবার, আর ভোটগ্রহণ করা হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি রোববার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত।