গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সমূহের মধ্যে বিভিন্ন কারিগরি শর্ট প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করে তাদেরকে আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে দক্ষ প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে সর্বমহলের প্রসংশা কুড়াচ্ছে।
শেরপুরের নকলা উপজেলাধীন গনপদ্দী এলাকায় স্থাপিত শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-এর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ৯ বছরে বিভিন্ন ট্রেডে ১৬ হাজার ৮১৩ জন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারী শর্ট প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন; এরমধ্যে ১৫ হাজার ৭৯৫ জন সফলতার সহিত সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে শেষের ৩ বছর (২০২১ সাল হতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তথ্য মতে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ৬ বছরে বিভিন্ন ট্রেডে মোট ৫ হাজার ৩৭০ জন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারী ভর্তি হয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৫ হাজার ১৪১ জন। আর ২০২১ সালে হতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ৩ বছরে বিভিন্ন ট্রেডে মোট ৮ হাজার ৪৯ জন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারী ভর্তি হয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ হাজার ২৪৭ জন। প্রথম দিকের ৬ বছরের সাথে শেষ দিকের ৩ বছরে যেখানে অর্ধেক ভর্তি ও উত্তীর্ণ হওয়ার কথা; সেখানে শেষর ৩ বছরে প্রথম দিকের ৬ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভর্তি ও উত্তীর্ণ হওয়ার নজির সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তীর্ণ প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ১৪ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পরিণত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৩১৪ জন দেশে ও ১১ হাজার ৮৫০ জন বিদেশে কর্মরত আছেন। জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ৬ বছরে শেরপুর টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশী মুদ্রা আয় করছেন ৫ হাজার ১৪১ জন; আর ২০২১ সালে হতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ৩ বছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশে পারি জমিয়েছেন ৭ হাজার ২৪৭ জন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারী।
এরই মধ্যে কেউ কেউ বিদেশী টাকা আয় করে নিজের দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন ব্যবসা করছেন। তারা হয়েছেন আত্মনির্ভশীল, তাদের সংসারে এসেছে সুখ-শান্তি। যা নকলা উপজেলাসহ শেরপুরবাসীর জন্য সর্বোচ্চ মানের সুখবর ও সফলতা বটে। শেরপুর টিটিসি’র এই নজির বিহীন সাফল্যের পিছনে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন এই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান।
অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান এমন অকল্পনীয় ও অভূতপূর্ব সফলতার বিষয়ে বলেন, শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-এর সকল ট্রেডের প্রশিক্ষকগনের আন্তরিক প্রচেষ্ঠা, নকলা উপজেলাসহ শেরপুরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও অত্যপ্রত্যয়ী শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারীরা স্বাবলম্বী হতে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহনের লক্ষ্যে স্বতঃস্ফুর্ত অশংগ্রহণের ফলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-তে ১১টি ট্রেড চলমান থাকলেও কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ও হাউজকিপিং ট্রেডের প্রশিক্ষক নাথাকায় তা আপাতত চালু নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষক বরাদ্দ বা প্রাপ্তি সাপেক্ষে বন্ধ থাকা ট্রেড দুটিতে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করা হবে। এছাড়া স্কিলস ফর এমপ্লয়মেণ্ট ইনভেস্টমেণ্ট প্রোগ্রাম (ঝঊওচ/সেইপ)-এর প্রকল্পের আওতায় ৪ মাসের ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্স প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি চলমান ব্যাচের পরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি জানান। তাই শেরপুরের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবনারীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করে তাদেরকে আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে তথা স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে শেরপুর টিটিসির অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান কর্তৃক নতুন ট্রেড প্রাপ্তিরর জন্য তিনটি প্রকল্পে আবেদের প্রেক্ষিতে তা অনুমোদন করেছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রশিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষকগনকে প্রশিক্ষক প্রদানের পরেই শুরু হবে নতুন তিনটি প্রকল্পের ১৯ টি ট্রেডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। প্রকল্প গুলোর মধ্যে- এএসএসইটি প্রকল্পের আওতায় ৭টি সাধারণ ট্রেড এবং পিকেএসএফ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক ৭ টি ও এসডিএফ প্রকল্পের আওতায় আরো ৫টি আধুনিক ট্রেডে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান। বিবিধ ফ্যাসিলিটি ও সক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।
দেশীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে, বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে, প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তুলতে ও বেকারত্ব কমাতে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পলন করছে বলে মন্তব্য করেনে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীসহ বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর জনগন।
শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) প্রশিক্ষকসহ চরম জনবল সংকটে রয়েছে। তাছাড়া অবকাঠামো, আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে কর্মকর্তাগন সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক সকল কাজের প্রক্রিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত চালিয়ে যাচ্ছেন। চরম জনবল সংকটের মধ্যেও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, আধিবাসীদের অধিকতর কল্যাণ ও নিরাপদ অভিবাসনের ভিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই টিটিসি। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য বিশ্ব শ্রমবাজারে চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, সুষ্ট ও সুসংহত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং কর্মীদের সুরক্ষা অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করা বলে জানান অধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান।