বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষক পুরষ্কার-২০২৩ এ শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃষক মো. ফরিদুল ইসলাম দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। ফরিদুল ইসলাম নকলা পৌরসভাধীন পৌরসভা ব্লকের চরকৈয়া এলাকার মো. মোনতাজ আলীর ছেলে।
যে ফরিদুল ২০০২ সালে টাকার অভাবে আলিম পরীক্ষা দিতে পারেনি, সেই ফরিদুল আজ উপজেলার মধ্যে একজন সফল ও শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। সে একাডেমিক সনদধারী উচ্চ শিক্ষিত হতে নাপারলেও, কৃষি ক্ষেত্রে সে একজন শিক্ষক বলে অনেকে মনে করেন। উপজেলার মধ্যে সে একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাদে বছরে লাভ থাকে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এই লাভের টাকায় চলে তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের ব্যয়।
ফরিদুল ইসলাম জানান, ২০০০ সালে বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা হতে দাখিল পাস করার পরে নকলা শাহরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিমে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় তার বাবার হাতে টাকা নাথাকায় সেখানেই থেমে যায় পড়ালেখার দৌড়। কিন্তু সফলতার স্বপ্নবাজ ফরিদুল থেমে থাকেননি। তিনি বাবার সাথে শুরু করেন কৃষি কাজ। এর পরে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মায়ের চাহিদায় তিনি অল্প বয়সেই বিয়ে করেন। ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ছেলে। এরপরে পরিশ্রমের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন তিনি। সংসারের আয় বাড়তে থাকে, আসতে শুরু করে সুখ। প্রতি বছর কিছু কিছু করে জমি কিনতে শুরু করেন তিনি। বাবার দেওয়া জমি ছাড়াও সংসার চালানোর পরে তার সঞ্চিত টাকায় কিনেন আরো ৫০ শতাংশ জমি। এই ফাঁকে তার ঘর আলো করে আরো এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। প্রথম ছেলে বর্মানে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী, দ্বিতীয় ছেলে ডিগ্রী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং একমাত্র মেয়ে শিশু। এখন তার বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সংসারে যেন সুখের শেষ নেই। ‘পরিশ্রম যে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি’ ফরিদুল তা প্রমান করেছেন।
তার সব জমিতে কৃষি অফিসারগনের পরামর্শে কৃষি আবাদ করায় তার সফলতা এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। তিনি হয়ে উঠেন একজন সফল ও মডেল কৃষক। বর্তমানে তার কৃষি থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা। তার এই সফলতা এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনে তার পরিশ্রম ও অবদান বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষক পুরষ্কার-২০২৩ এ দ্বিতীয় বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে দেওয়া দ্বিতীয় পুরষ্কার বিজয়ী সনদপত্র, ক্রেষ্ট ও উপহার সামগ্রী। তার সুনাম আজ কৃষি অফিসার থেকে শুরু করে উপজেলার প্রতিটি কৃষকের মুখে মুখে।
উল্লেখ্য, কৃষি বিভাগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলটি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৬টি জেলার ৬০টি উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৬০টি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সফলতা এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনে পরিশ্রম ও অবদান বিবেচনায় ৪ জনকে প্রথম, ৮ জনকে দ্বিতীয় ও ২০ জন কৃষককে তৃতীয় পুরষ্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে শেরপুর জেলার একজন প্রথম স্থান (শ্রীবরদী উপজেলার), ২ জন দ্বিতীয় স্থান (নকলা ও ঝিনাইগাতী উপজেলার) এবং ৫ জন কৃষক (শেরপুর সদরের ১জন, শ্রীবরদীর ২ জন ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ২জন) তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কৃষক বাছাইকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (বর্তমানে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ফরিদুল একজন সত্যিকারের পরিশ্রমী কৃষক। সে তার মেধা ও পরিশ্রমের কারনেই উপজেলা ছাড়িয়ে আঞ্চলিক পর্যায়েও শ্রেষ্ঠত্বের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।