বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

নগদ একাউন্ট থেকে ভূতে তুলেনিচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা!

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৫৩ বার পঠিত

শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নগদ অ্যাকাউন্টে আসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও হয়ে গেছে। নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে শিশু শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীর অভিভাবক কেউই টাকা উঠায়নি। তাহলে পার্সোনাল নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা গেলো কোথায়? তারা মানে এইকি যে, নগদ একাউন্ড থেকে ভূতে তুলে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা? এমন প্রশ্ন অগণিত অভিভাবকের।

তাছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিট অ্যালাউন্স বাবদ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে ১,০০০ (এক হাজার) টাকা নগদের (ঘধমধফ) মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিলো বলেও বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে। কিন্তু নগদ (ঘধমধফ) থেকে কোন তথ্য, মেসেজ, নির্দেশনা ও চিঠি ছাড়াই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ টাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল একাউন্টে পাঠিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ। যার কোন হদিশ কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবগন পায়নি বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।

নগদ কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি বিশেষ চক্র শিক্ষার্থীদের এসব উপবৃত্তির টাকা তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তবে এই বিষয়ে কোন প্রকার দায় নিতে রাজি নয় প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নগদ কর্তৃপক্ষ। এদিকে শিক্ষকগন বলছেন, অধিক স্বচ্ছতার জন্যই সরাসরি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনের মোবাইলে টাকা পাঠানো হয়। অতএব এক্ষেত্রে আমাদের কোন কিছু করার সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবকগন; হতাশ শিশু শিক্ষার্থীরা।

নকলা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোশফিরাত তাসনিম নুঝাত জানায়, গত বছর তাদের উপবৃত্তির কোন টাকাই আসেনি। এ বছরের প্রথমার্ধে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা তার বাবার মোবাইলে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয় তার প্রথম ধাপের উপবৃত্তির ৯০০ টাকা এসেছে। পরে একাউন্ড চেক করে টাকা দেখে তারা নিশ্চিত হয়। তবে ওই টাকা তাৎক্ষণিক না উঠিয়ে বছর শেষে দ্বিতীয় ধাপের ৯০০ টাকা আসলে একসাথে ১,৮০০ টাকা উঠিয়ে তাদিয়ে কোন একটা কিছু করার আশায় মোবাইল একাউন্টেই রেখে দেওয়া হয়।

১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) মোশফিরাত তাসনিম নুঝাতের বাবার মোবাইলে নগদের পক্ষ থেকে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয় উপবৃত্তির ৯০০ টাকা জমা হয়েছে। পরে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরের দিকে আগের ও পরের মিলিয়ে মোট ১,৮০০ টাকা তুলতে গেলে চোখ কপালে উঠে যায় নুঝাতের বাবা মোশারফ হোসাইনের। ব্যালেন্স দেখতে গিয়ে দেখাযায় শুধু দ্বিতীয় ধাপের টাকা জমা আছে। পরে মাই নগদে গিয়ে মিনি স্টেটমেন্টে গিয়ে দেখা যায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই একাউন্ট থেকে ৮৯০ টাকা ট্রান্সফার বা ক্যাশআউট করা হয়েছে। এবিষয়ে মোশফিরাত তাসনিম নুঝাতের বাবা কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, আমি আমার একান্টে কয়েকবার প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু বার বার পিন নম্বর ভুল দেখিয়েছে। পরে পিন নম্বর রিসেট করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে নকলা শহরের উত্তর বাজারের এম.অর.এস টেলিকম-এর স্বত্ত্বাধিকারী মাসুম বেলালের মাধ্যমে নগদ অফিসে ফোন দিয়ে পিন নম্বর রিসেট করা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপের ৯০০ টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোশাররাত তাসনিম রায়তার অভিভাবক হাফছা আইরিন বলেন, বহুবার চেষ্টার পর নগদের হেল্পলাইন থেকে আমার নগদ একাউন্টের পিন রিসেট করেছি। তারপর মিনি স্টেটমেন্টে গিয়ে জানতে পারি আমার মোবাইলের নগদ একাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। আবাক কান্ড! আমি জানলাম-ই না, আর ক্যাশ আউট হয়ে গেলো কেমনে? কার কাছে এই ডিজিটাল প্রতরনার প্রতিকার পাবো? আর আমাদের টাকার কি হবে?

আশিক, লিয়াকত, তাহমিনা, লাইজু, শিপন ও কবিতাসহ অনেক অভিভাবক মৌখিক অভিযোগে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না অনেকেই। মিনি স্টেটমেন্টে গিয়ে দেখা যায় ক্যাশআউট হয়ে গেছে। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কিট এলাউন্সের ১ হাজার, ছয় মাস উপবৃত্তির ৯ শত টাকা এ্যাকাউন্ট থেকে অটো ভাবে উধাও!

তারা অরো বলেন, বহুবার চেষ্টার পর টাকা উঠানোর হেল্প লাইনের পরম কৃপায় পিন রিসেট করে ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে দেখি ব্যালেন্স শুণ্য, কোন টাকা নেই! হারিয়ে যাওয়া এই টাকা প্রাপ্তির জন্য নগদ অপারেটরের এজেন্ট আর স্কুলে ঘুরতে ঘুরতে চরম হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে তাদের মতো অগণিত অভিভাবকদের। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ বলছেন একান্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে, সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এমন কথা বললে আমরা কোথায় যাবো? কার কাছে গেলে এই ডিজিটাল প্রতারনার প্রতিকার পাবো? আর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকারই কি হবে? এমন প্রশ্ন হাজারো অভিভাবকের।

খুবদ্রুত সময়ের মধ্যে এমন ডিজিটাল প্রতারণা বন্ধ করতে না পারলে শিক্ষা বান্ধব সরকারের মহৎ উদ্যোগ গুলো দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে সুশীলজন মনে করছেন। তারা জানান, সারাদেশে প্রতারকচক্র পরিকল্পিত ভাবে এমন অবৈধ কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে কিংবা উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির পদ্ধতিটি পরিবর্তন না করলে প্রতিবারই শিশু শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সমূহ।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।