শেরপুরের নকলা উপজেলার কমিনিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সকল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চার মাস যাবৎ অজ্ঞাত কারনে বেতন বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার দেশের প্রতিটি পুরাতন ওয়ার্ডে একটি করে কমিনিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। সেসব ক্লিনিকে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ করা হয়। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের সকল বেতন ভাতাদি প্রতিমাসে নিয়মিত দিয়ে আসলেও, অজ্ঞাত কারনে জুলাই মাস থেকে সকলের বেতন বন্ধ রয়েছে। ফলে সিএইচসিপিদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে তারা জানান।
বাউসা ক্লিনিকের সিএইচসিপি এস.এম মনিরুজ্জামান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এতে দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামীন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু আমরা স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও চার মাস ধরে মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বেতন কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না তাও জানি না। শুনেছি সারাদেশের নাকি একই অবস্থা। আমাদের মধ্যে অনেকের আয়ের অন্যকোন উৎস্য না থাকায়, একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধŸগতি অন্যদিকে বেতন বন্ধ! এখন সংসারের খরচ চালানো নিয়ে আমরা বেকায়দায় পড়ে গেছি। এমতাবস্থায় অনেক সিএইচসিপি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। উপজেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে চেয়েও কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
ধুকুড়িয়া ক্লিনিকের লূৎফর রহমান বলেন, শুনেছিলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে সরকারি চাকরির মতো সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা পাবোতো দূরের কথা, এখন চার মাস ধরে আমাদের বেতনই বন্ধ হয়ে আছে।
ভূরদী ক্লিনিকের বিজলী বেগম বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে সর্বশেষ বেতন পেয়েছিলাম। এরপর থেকে বিগত ৪ মাস আমরা বেতন পাচ্ছি না, চলতি মাসেও পাব বলে মনে হচ্ছে না। শুনেছি অর্থ ছাড় না হওয়ার কারনে আমাদের বেতন আটকে আছে। তবে কবে নাগাদ বেতনের অর্থ ছাড় করা হবে তাও জানি না। এ অবস্থায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে অনেকের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
চিলথলিয়া ক্লিনিকের আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রায় এক যুগ ধরে একই বেতনে চাকরি করছি, আমাদের বেতনের কোন পরিবর্তন নেই। শুনেছিলাম আমাদের চাকরি নাকি রাজস্ব খাতে নেওয়া হবে; অথচ এখন নিয়মিত বেতনই পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় সংসারের খরচ বহন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আশা করছি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন আমাদের মতো গ্রামীণ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের সকল কষ্ট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এবিষয়ে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি প্রকল্পের অধিনে চলছে। মূলত ওই প্রকল্পই কমিউনিটি ক্লিনিকের বেতন ছাড় দেয়। তবে জুলাই মাস থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় আপাদত সিএইচসিপিদের বেতন আটকে আছে। এই সমস্যা শুধু নকলা উপজেলায় নয়। সারা দেশের সকল কমিনিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি’র বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই অর্থ ছাড় দেওয়া হতে পারে। প্রকল্প থেকে তাদের বেতনের অর্থ ছাড় করলেই সকল সিএইচসিপিরা তাদের বকেয়াসহ বেতন পেয়ে যাবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামীন জনগনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কমিনিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের বেতন ছাড় না হলে তাদের মাঝে কাজের স্পৃহা ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে জনস্বার্থে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনসহ স্থায়ীভাবে সকল সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন অগণিত সুবিধাভোগীসহ স্থানীয় সুশীলজন।