শেরপুরের নকলায় ১৯টি মন্ডপ ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সাংবাৎসরিক দুর্গাপূজা ও দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটছে আজ মঙ্গলবার। হিন্দু বিশ্বাসমতে, আজ মর্ত ছাড়বেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। ফিরে যাবেন কৈলাসে। একদিকে বিদায়ের সুর; অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন মণ্ডপে চলে আবির উৎসব। মঙ্গলবার সকালে দেওয়া হয় দর্পণঘট বিসর্জন।
এবছর নকলা পৌরসভা এলাকায় ৪টি, গনপদ্দী ইউনিয়নে ৩টি, নকলা ইউনিয়নে একটি, উরফা ইউনিয়নে ৩টি, বানেশ্বরদী ইউনিয়নে একটি, পাঠাকাটা ইউনিয়নে একটি, টালকী ইউনিয়নে একটি, চরঅষ্টধর ইউনিয়নে ২টি ও চন্দ্রকোণা ইউনিয়নে ৩টি মন্ডপে দুর্গা পূজা উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিলো।
অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির আকাঙ্খা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ সমাপন ঘটবে শারদীয় পূজার। আজ মঙ্গলবার শুভ বিজয়া। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক আর বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা হবে। তাই ঢাকের বোলে নিনাদিত হচ্ছে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’।
হিন্দুদের বিশ্বাসে বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ী রূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফিরে যাবেন কৈলাস পর্বত শিখরে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসেন ঘোড়ায় চড়ে। আজ বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেবেন ঘোটকেই। ফল ‘ছত্রভঙ্গ স্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী জানা গেছে। তাদের শাস্ত্র মতে দেবী দুর্গার এমন আগমন ও গমন ঘটলে সাধারণত রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় ‘ছত্রভঙ্গম’।
নকলা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী কালি মাতা মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী সুরঞ্জিত কুমার বণিক জানান, আজ দুপুরের শেষদিকে দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবীকে শোভাযাত্রাসহ টেহাইন বিলের অংশ সেফাকুড়ি বিলের সেফাকুড়ি ব্রীজ পাড় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিসর্জনের মাধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হবে এবং সেফাকুড়ি ব্রীজের পাশেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। ছত্রকোনা পূজা মন্ডপের সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুকুমার চন্দ্র সরকার জানান, তাদের মন্ডপের প্রতিমাও সেফাকুড়ি ব্রীজের পাশেই বিসর্জন দেওয়া হবে।
এছাড়া পৌরসভার বাদাগৈড় কালি মাতা মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী শ্যামল সূত্রধর জানান, তারা ময়মনসিংহ-নাকুগাঁও স্থল বন্দরের নকলা বাইপাস ব্রীজের নিকটে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর পরে সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দিবেন।
নকলা ইউনিয়নের দক্ষিণ নকলা রবিদাস বাড়ী দুর্গা পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী সুনিল রবিদাস ও বর্মনপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী নিমাই চন্দ্র বর্মন জানান, তারা গনপদ্দী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পেকুয়াবিলে তাদের মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দিবেন।
উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা পূর্বপাড়া রাদাগোবিন্দ মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী তাপস চন্দ্র সূত্রধর ও সাধারণ সম্পাদক বাঁধন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, আমাদের বাড়ির নিকটে কোন বড় বিল বা নদী না থাকায় তেলী খালে আমাদের মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।
বানেশ্বরদী ইউনিয়নের আড়িয়াকান্দা ও বালিয়াদী সাহাপাড়া যৌথ মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী সুকুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী সজিব চন্দ্র সাহা জানান, তাদের বাড়ির নিকটে খাল-বিল-নদী না থাকায় স্থানীয় গোপাল চন্দ্র সরকারের পুকুরে তাদের প্রতিমা বিসর্জন দিবেন।
পাঠাকাটা ইউনিয়নের পাঠাকাটা চৌরাস্তার মোড় দুর্গা পূজা মন্ডপের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চন্দন সরকার জানান, তাদের দেবী দুর্গাকে ব্রহ্মপুত্র নদের নারয়নখোলা ঘাটপাড় এলাকায় শেষ বিদায় জানানোর পরে ব্রহ্মপুত্র নদেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।
টালকী ইউনিয়নের টালকী রবিদাস বাড়ী পূজা মন্ডপের সাধারণ সম্পাদক শ্রী পরিমল রবিদাস জানান, তারা তাদের মন্ডপের প্রতিমা এবছর অজ্ঞাত কারনে বিসর্জন দিবেন না। তবে অন্যকোন এলাকার প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিবেন।
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকী দেববাড়ী পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী মুনিলাল চৌহান জানান, তারা ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা সূতীখালি নদীতে বির্সজন দিবেন। চরমধুয়া বর্মনপাড়া পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রীসুমন চন্দ্র বর্মন ও শ্রী পবিত্র চন্দ্র বর্মন জানান, তাদের প্রতিমা ব্রহ্মপুত্র নদে বিসর্জন দিবেন।
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। প্রায় প্রতিটি পূজা মন্ডপ কমিটির উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও পরিদর্শন কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরতি থাকার পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার রাত ১০ টার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন তথ্য-সূত্রে জানা গেছে।