শান্তির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছেন দেবী দূর্গা। ১৪ অক্টোবর শনিবার মহালয়ার পরে ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠীর মাধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের পূর্ণ অনুষ্ঠানিকতা। এবার দেবীর আগমন ও প্রস্থান দুটিই ঘোটকে হওয়ায় ভক্তবৃন্দসহ সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এবারের পূজা উৎসব অপেক্ষাকৃত কম সুখকর।
এবার শেরপুরের নকলায় ১৯টি মন্ডপের মাধ্যমে দুর্গা পূজা উদযাপন ও দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। পূজা মন্ডপ গুলোকে আকর্ষণীয় ভাবে সাজানো হয়েছে। অনেক মন্ডপকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করতে চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। প্রতিমাকে অধিকতর আকর্ষণীয় করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন প্রতিমা তৈরীর কারিগর ও ডেকোরেশন শ্রমিকরা।
নকলা উপজেলা শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত কালী মাতার মন্দির পূজা মন্ডপের সভাপতি শ্রী সুরঞ্জিত কুমার বণিকের দেওয়া তথ্য মতে, এবার নকলা পৌরসভা এলাকায় ৪টি, গনপদ্দী ইউনিয়নে ১টি কমে হয়েছে ৩টি, নকলা ইউনিয়নে ২টি মন্ডপ থেকে একটি কমেছে। উরফা ইউনিয়নে ৩টি, গৌড়দ্বার ইউনিয়নে কোন মন্ডপ প্রস্তুত করা হয়নি। বানেশ্বরদী ইউনিয়নে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে একটি মন্ডপ স্থাপন করে সেখানে পূজা উদযাপন করা হচ্ছে। তাছাড়া পাঠাকাটা ইউনিয়নে ২টি মন্ডপ থেকে একটি কমিয়ে একটিতে পূজা উদযাপন চলছে। টালকী ইউনিয়নে একটি, চরঅষ্টধর ইউনিয়নে নতুন ভাবে একটি মন্ডপ স্থাপন হওয়ায় এখন ২টি মন্ডপে পূজা উদযাপন করা হচ্ছে ও চন্দ্রকোণা ইউনিয়নে ২টি মন্ডপ নতুন করে স্থাপন করায় ওই ইউনিয়নে ৩টি মন্ডপে দুর্গা পূজা উদযাপন ও দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সভাপতি দেবজিৎ পোদ্দার ঝুমুর ও সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ কুমার বণিক অভি জানান, এবছর নকলা উপজেলায় পূর্বের চেয়ে একটি মন্ডপ বেড়েছে। ফলে এবার উপজেলায় ১৯টি পূজা মন্ডপে ভক্তবৃন্দসহ সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা উদযাপন ও দুর্গোৎসব করছেন। ভক্তবৃন্দদের ধর্মীয় কাজের সুবিধার্থে মন্ডপ এলাকায় পুলিশ বিভাগ ও আনসার-বিডিপি সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তাঁরা জানান।
শ্রী শ্রী দুর্গা মায়ের রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়ার পরে দেবী বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২০ অক্টোবর শুক্রবারর মহাষষ্ঠী, তারপর পর্যায়ক্রমে মহাসপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং সর্বশেষে ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যদিয়ে এবারের পূজা উদযাপন শেষ হবে বলে জানান পুরোহিতগন। তাঁরা আরও জানান, এবার শ্রী শ্রী দুর্গা দেবী ঘোটকে চড়ে আগমন করেছেন এবং গমন করবেন বা ফিরে যাবেন ঘোটকে চড়েই। ফলে এবার দেবীর আগমন ও প্রস্থান দুটিই অপেক্ষাকৃত কম সুখকর বলে জানিয়েছেন পুরোহিতগন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান, উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে সাজ-সাজ রবে পূজা উদযাপন ও দুর্গোৎসব চলছে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি পূজা মন্ডপে পুলিশ সদস্য, আনসার ও গ্রাম পুলিশ এবং টহল পুলিশ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। তাছাড়া মন্ডপ পরিচালনা পরিষদের বরাতে তিনি আরো জানান, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও নিজ নিজ এলাকার মন্ডপের নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালন করবেন। আনন্দ করতে গিয়ে যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না হয় এরজন্য অতিমাত্রার আনন্দ থেকে বিরত থাকতে ভক্তবৃন্দ ও সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তথ্য মতে, এবছর জেলায় ১৪২টি মন্ডপ থেকে ১৫টি বেড়ে হয়েছে ১৫৭টি পূজা মন্ডপ। এরমধ্যে শেরপুর সদর উপজেলার ৬২টি থেকে হয়েছে ৭২টি মন্ডপ, নালিতাবাড়ীতে ৩৫টি থেকে হয়েছে ৩৬টি, নকলা উপজেলায় একটি বেড়ে হয়েছে ১৯টি, ঝিনাইগাতীতে একটি বেড়ে হয়েছে ১৮টি ও শ্রীবরদী উপজেলায় ২টি বাড়িয়ে ১২টি মন্ডপ স্থাপন করা হয়েছে। এসব মন্ডপের মাধ্যমে দুর্গা পূজা উদযাপন ও দুর্গোৎসব পালন করছেন ভক্তবৃন্দসহ সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।