সারা দেশের ন্যায় শেরপুরের নকলায় বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়েছে। ডিমের গুণগতমান সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে “ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি” এই প্রতিপাদ্যকে ধারন করে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ২১তম বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়।
এ উপলক্ষে উপজেলার গনপদ্দী ইউনিয়নে স্থাপিত প্রধান মন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ন প্রকল্পে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আয়োজনে জনসচেতনতা মূলক আলোচনা সভা করা হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইসহাক আলী-এঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন, জেলা পরিষদের সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন, উপসহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান মঞ্জু ও জাহাঙ্গীর আলম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মো. বেলায়েত হোসেন বাবুল প্রমুখ।
বক্তারা ডিম দিবসের গুরুত্ব এবং ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা জানান, ডিমকে বলা হয়ে থাকে পরিপূর্ণ (সুষম) খাদ্য। ডিমে যেসব পুষ্টিগুণ থাকে, তা সাধারণত অন্যান্য খাবারে খুব কমই থাকে। এটি গর্ভবতী মা, শিশু, কিশোর এবং বয়স্কদের জন্যে অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তারা আরো জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ডিমের বাৎসরিক প্রাপ্যতা মাথাপিছু ১৩৫টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৩৬টি।
আলোচনা সভার আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীসহ উপস্থিত দুইশতাধিক এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে সিদ্ধ ডিম খাওয়ানো হয়। এসময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারি, গনপদ্দী আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণি ও বয়সের জনগন, স্থানীয় পশু পালনকারী ও কৃষক-কৃষাণীগন, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে, ২০১২-১৩ সালে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৭৬১.৭৪ কোটি, কিন্তু তা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ২০২১-২২ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৩৫.৩৫ কোটিতে। অর্থাৎ গত দশ বছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ বাস্তবায়নে জনপ্রতি দুধ ২৭০মিলি, মাংস ১৫০গ্রাম ও ডিম ১৬৫টি বছরে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে জনপ্রতি দুধ ৩০০মিলি, মাংস ১৬০গ্রাম ও ডিম ২০৮টি বছরে ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম উৎপাদনের একটি প্রাক্কলন করেছে। সে হিসাব অনুযায়ী ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডিমের বার্ষিক উৎপাদন হবে প্রায় ৩২৯৩.৪ কোটি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৪৬৪৮.৮ কোটি।
পুষ্টি বিজ্ঞানের মতে, একটি সম্পূর্ণ ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম মানসম্মত প্রোটিন, ৫ গ্রাম উন্নত ফ্যাটি এসিড, ৭০ থেকে ৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি, ১০০ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম কোলিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ থাকে। ডিমের প্রোটিনে রয়েছে মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সকল অ্যামাইনো এসিড যা দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনে সহায়ক। ডিমের ফ্যাটি এসিডে এলডিএলের চেয়ে এইচডিএল এর অনুপাত বেশি। ফলে নিয়মিত ডিম খেলে রক্তে এইচডিএলের অনুপাত বাড়ে।
মুরগির ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ডিমের কোলিন মস্তিস্ক কোষ গঠন ও সিগন্যালিং সিস্টেমে কাজ করে মানুষের স্মরণশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও ডিমে লিউটিন ও জেক্সানথিন রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে।
তথ্যমতে, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত আইইসি ভিয়েনা কনফারেন্স থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে একটি ইতিবাচক ক্যাম্পেইন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের প্রয়োজনীয়তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবারে বিশ্বজুড়ে “বিশ্ব ডিম দিবস” উদযাপিত হয়ে আসছে।