নারীদের স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করার জন্যই প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়। “স্ক্রিনিং জীবন বাঁচায়” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশে ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
এর অংশ হিসেবে ১০ অক্টোবর বেলা ১১টায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬টি জেলা অভিমুখে “গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা” উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদারের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি টিম গোলাপি সাজে সজ্জিত একটি বাসে আজ রওনা করেন। শোভাযাত্রাটি বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে শেরপুরের নকলায় পৌঁছে। এই শোভাযাত্রাটি টানা ৪ দিনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬টি জেলা ও প্রায় ১০টি উপজেলায় পথসভা, শোভাযাত্রা ও লিফলেট বিতরণ করার কার্যক্রম চালানোর কথা। এই টিমে চিকিৎসক ছাড়াও ক্যান্সার সারভাইভার, সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক রয়েছেন।
তথ্য মতে, বিশ্বজুড়েই নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে এবং সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে ৯০ ভাগ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আর তাই তিন-চতুর্থাংশ রোগীর রোগ ধরা পড়ে একদমই শেষ পর্যায়ে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, আর মারা যায় প্রায় ৮ হাজার নারী। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এবছর ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে ১১তম স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালিত হয়। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ২০১৩ সাল থেকে বেসরকারিভাবে এই দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি বয়সে প্রথম সন্তান ধারণ করা অথবা নিঃসন্তান থাকা, সন্তানকে বুকের দুধ পান না করানো, বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে, পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পিল বা বড়ি খেলে, ১২ বছর বয়সের আগে প্রথম ঋতুস্রাব হলে অথবা ৫০ বছর পরে গিয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে, অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, ধূমপান, মদ্যপান এবং তামাকজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত থাকলে, দীর্ঘদিন তেজষ্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকা নারীরা স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্য এক তথ্য মতে, বিশ্বের প্রতি ৮ জনে ১ জনের স্তন ক্যানসারের অশঙ্কা রয়েছে! আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার- আইএআরসি’র হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারেরও বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬,৭৮৩ জন। নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৯% ভোগেন স্তন ক্যানসারে! তথ্যগুলো মোটেও সুখকর নয়।
এর ওপর আছে ক্যানসার চিকিৎসার নানা বিড়ম্বনা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ক্যানসারের সব ধরনের চিকিৎসা বিদ্যমান থাকলেও তার সুব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন। এছাড়াও ব্যয়বহুল এসব চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হয় মধ্যবিত্ত থেকে নিন্মবিত্ত মানুষের। তার উপর সত্যিকার অর্থেই কোথায় ভালো একটু চিকিৎসা পাবেন সেই তথ্য নিয়েও আছে হাজারও বিভ্রান্তি। আর এসব বিবেচনায় ক্যানসার মানেই ভোগান্তির এক দীর্ঘ অধ্যায়।
আর সে কারণেই একটু নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের মতো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশে ক্যানসার প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো সুখকর উপায় নেই। শরীরের ভেতরের ক্যানসারগুলো তো বুঝতে সমস্যা হয় কিন্তু স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো উঁকি দেয় শরীরের বাইরেই। শুধু চাই একটু সচেতনতা, আর একটু সতর্কতা।
আর এই সতর্কতা চাই নারী ও পুরুষ সবারই। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ, পুরুষরাও এখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নারী-পুরুষ মিলে তা ৮.৩%। স্তন ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ২০১৩ সালে সচেতনতার কাজ শুরু হয়। বেসরকারিভাবে ১০ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালন শুরু করে।
স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার এই তিনটির জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করা জরুরি। এই স্ক্রিনিং ও রোগ নির্ণয়ের সুযোগ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য সৃষ্টি ও বিস্তৃত করতে হবে। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।