শেরপুরের নকলায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে ‘রাইটস অব রিভার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নকলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ও আয়োজনে এ সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার সময় প্রেস ক্লাবের অফিস কক্ষে ক্লাবটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরপুর পুলিশ লাইন্স একাডেমী ফর ক্রিয়েটিভ (প্লেস) এর প্রধান শিক্ষক ও নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ শেরপুরের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন- প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।
এসময় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন ও মো. নূর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-আমিন, সদস্য রাইসুল ইসলাম রিফাত, রেজাউল হাসান সাফিত, শেরপুর পুলিশ লাইন্স একাডেমী ফর ক্রিয়েটিভ (প্লেস) এর ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান রুপম, ভিডিও ক্রিয়েটর ও ভয়েজার সাংবাদিক মনোহর মাহমুদ মিলনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা জানান, দেশে যে হারে জনগন বাড়ছে, ঠিক সেই হারেই কমছে নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন জলাশয়। মানুষের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও বিভিন্ন ভবন তৈরী করা হচ্ছে। ফলে জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন খুব দ্রুত কমতেছে। জলাশয় কমার সাথে সাথে কমছে সমাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় তথা অত্যাবশ্যকীয় মাছ, মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী। প্রকৃতি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তাই প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষা তথা সংরক্ষণ করার এখনই সময়। নতুবা এমন একদিন আসবে যেদিন প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া মৎস্য সম্পদ বলতে আর কিছু থাকবে না। প্রকৃতি ভুলে যাবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। হারিযে যাবে প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহ। এতেকরে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হবে খাদ্যশৃঙ্খল। যা মানুষসহ সমাজের জন্য খুবইক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে বলে প্রকৃতিবিদগন মনে করছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘বিসি রিভারস ডে’ পালন দিয়ে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদীবিষয়ক আইনজীবী মার্ক অ্যাঞ্জেলো দিনটি ‘নদী দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিসি রিভারস ডে পালনের সাফল্যের হাত ধরেই তা আন্তর্জাতিক রূপ পায়। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে।
বক্তারা আরো জানান, জনগনের অসেচতনতার ফলে তৈরী হওয়া দীর্ঘ দিনের নদী দখলের মতো বিভিন্ন অব্যবস্থাপনাকে সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রক্ষায় তথা নদী রক্ষায় কাজ করলে দেশের সকল নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় একদিন দখল মুক্ত হবেই হবে। তবে নিজ নিজ এলাকার নদ-নদী, হাওর-বাওর, নালা-ডোবা, পুকুর ও হ্রদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষায় সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান তাঁরা।
আশার বিষয় হলো, সরকার নদ-নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে নদ-নদী রক্ষায় কাজ করছে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা ও দখল রোধে প্রধান দায়িত্ব পালন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীপাড়ের বন্দরগুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। আর নদীর পানি দূষণ ঠেকানোর কাজে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নদী দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কাজ করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এছাড়া আরো বেশ কিছু বিভাগ ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন নদী রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলেও বক্তারা জানান।