সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজ নামে ডাইনামিক ওয়েবসাইট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী’র স্বাক্ষর করা এক নির্দেশনায় নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়েবসাইট করার কথা বলা হয়। এতে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৈরীকৃত ওয়েবসাইটের ঠিকানা মাউশি দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই সুযোগে নামি-বেনামি বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আকৃষ্ট করতে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। বলা হচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা। অর্ডার দেওয়ার এক দিনের ব্যবধানে নামমাত্র ওয়েবসাইট ডেলিভারী দেওয়া হচ্ছে। যা অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বুঝে উঠছেননা। মূলত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ডোমেইন কিনার পরে পূর্ব নির্মিত ফ্রেম (রেডি টেমপ্লেট) ব্যবহার করে নামমাত্র তথ্যনির্ভর ওয়েবসাই রেডি করেই একদিনেই ওয়েবসাইট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠান পরিচিতি, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য, ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার রুটিন, বিভিন্ন নোটিশ, পাঠ্যসূচি ও ফল সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও এসবরে কিছুই থাকছে না এসব নামমাত্র ওয়েবসাইটে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ওয়েবসাইট এর আগেও করা হয়েছিলো; কিন্তু নামসর্বস্ব আইটি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষ আইটি উদ্যোক্তাদের কারণে সেইসব ওয়েবসাইটগুলো আজ অচল হয়ে পড়ে আছে। এতেকরে জেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা সম্পূর্ণ ভাবে গচ্চা গেছে। এবারও ওইসব নামসর্বস্ব আইটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে আগের সেইসব অদক্ষ আইটি উদ্যোক্তারা মাঠে নেমেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অল্প খরচে সর্বোচ্চ মানের ওয়েবসাইট পাওয়ার মতো চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। এরফলে আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা গচ্চা যাওয়ার শঙ্কা করছেন আইটি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকগনসহ স্থানীয় অনেক শিক্ষানুরাগী। তাছাড়া আইটি বিষয়ে যেকোন প্রতারণা এড়াতে অনুমোদিত আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েবসাইট নির্মাণ সহায়তাসহ আইটি বিষয়ক বিভিন্ন সহযোগিতা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন জেলা-উপজেলার শিক্ষা অফিসারগন।
আইটি উদ্যোক্তারা বলছেন, বিটিসিএলের নির্দেশনা ও মূল্য অনুযায়ী সরকার নিবন্ধিত একটি ডোমেইনের মূল্য যেখানে দুই হাজার টাকার ওপরে, সেখানে এত কম টাকায় মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব না। টাকা বাঁচাতে গিয়ে এসব বেনামি প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েবসাইট নির্মাণ করলে আবারও অযথা হয়রানিসহ টাকা অপচয়ের মধ্যে পড়তে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।
আইটি উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন সোহেল জানান, একটি সরকারি নির্দেশনার পর নামসর্বস্ব অনেক বেনামি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পা নাদিতে সকলকে সচেতন থাকা জরুরি। নতুবা আবারো ওয়েবসাইট অচল হয়ে পড়ে থাকতে পারে।
দেশসেরা আইটি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভূক্ত বিডি আইটি জোন-এর প্রধান নির্বাহী ইফতেখার হোসেন পাপ্পু বলেন, আমরা গতবারও দেখেছি, নামধারী ভুয়া আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সরকারি প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষকদের বোকা বানিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এবার যাতে কেউ প্রতারিত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নতুবা গতবারের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।
ঝিনাইগাতী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির মলাটে প্রতিষ্ঠানের জন্য গত বছর ভূয়া প্রতিষ্ঠানের তৈরীকরা ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া থাকলেও তাতে প্রবেশ করা যাচ্ছেনা। ওই ওয়েবসাইট কারো কাজে আসেনি এবং কাজে আসছেনা। এই প্রতিষ্ঠানের মতো প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাইনামিক ওয়েবসাইট সমূহ আজ অচল হয়ে আছে। তবে নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার মতো বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সচল রয়েছে।
নকলা উপজেলার গনপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, আগের বার সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট করা হলেও দক্ষ জনবল না থাকায় ওয়েবসাইটের হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পরবর্তীতে ডোমেইন রিনিউ না করার জন্য ওয়েবসাইট চলমান ছিল না। তবে চলতি বছর আবার নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়েবসাইটের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। খুবদ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকনহ সবার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে কাজে আসার উপযোগী হবে। নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচিতি, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য, ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার রুটিন, বিভিন্ন নোটিশ, পাঠ্যসূচি ও ফলাফল ঘরে বসেই পাওয়া যাবে। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ফি প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের বেতনও দেওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অনেক শিক্ষার্থী জানায়- তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সচল থাকলে এর মাধ্যমে তাদের অভিভাকগন ঘরে বসেই তাদেরকে মনিটরিং করতে পারতেন। তাই দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজস্ব ওয়েবসাইট সচল থাকা জরুরি বলে সবাই মনে করছেন।