রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নকলা বিএডিসি হিমাগারে বাকৃবি’র হর্টিকালচার বিভাগের শিক্ষার্থীদের একদিন কর্মসম্পাদন ফলাফলে সারাদেশের মধ্যে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ১ম ও শেরপুর পলিটেকনিক ৭ম ফেনীতে বন্যাদূর্গতদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন নকলায় ভ্যানগাড়ীর চাপায় শিশু নিহত শেরপুরের নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে পুলিশ সুপারের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেরপুরে ডপস শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভায় শিক্ষা উপকরণ বিতরণ নকলায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে শেরপুরে ডপস শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভায় শিক্ষা উপকরণ বিতরণ নকলায় শতভাগ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরষ্কার প্রদান নকলায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প : কাজে আসেনি নকলার কৃষকের

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২১০ বার পঠিত

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে কৃষকের ফসল রক্ষা করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপন করেছিল কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড। ২০১৮ সালে স্থাপন করা ‘কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড’ ও ‘অটোমেটিক রেইন গেজ’ গুলো শুরু থেকেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যাদের (কৃষকদের) উদ্দেশ্যে স্থাপন করা এই আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প, সেই কৃষকদের এক মুহুর্তের জন্যও কাজে আসেনি।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়র পরিষদ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চুরি হয়ে গেছে রেইন গেজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। এসবের কোন অস্তিত নেই। উদাও হয়েগেছে আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ডের সকল যন্ত্রাংশ। এতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পটি।

জানা গেছে, ডিসপ্লে বোর্ডে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুর আদ্রতার হার, বায়ুপ্রবাহ, দিনের আলো কতক্ষণ থাকবে ও ঝড়ের পূর্বাভাসসহ অন্তত ১০টি তথ্য প্রকাশের স্থান রয়েছে। এই বোর্ড থেকেই তিন দিন আগের ও তিন দিন পরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারার কথা কৃষকদের। কিন্তু এসব বোর্ড স্থাপনের পর থেকে কেউ এর কোন কার্যক্রম দেখেনি। এক সেকেন্ডের জন্যও চালু করা সম্ভব হয়নি এই কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ডের কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ডগুলো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। এ বোর্ড থেকে কৃষকদের নিয়মিত আবহাওয়া পরামর্শ সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না বা পায়নি কেউ। কোন কোন ইউনিয়ন পরিষদে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে ডিসপ্লে বোর্ড, সোলার প্যানেল ও রেইন গেজ মেশিনগুলো। তবে অধিকাংশ ইউনিয়নে এসব যন্ত্রপাতির কোন খোঁজ খবর নেই।

গনপদ্দী, নকলা, উরফা, বানেশ্বরদী ও পাঠাকাটা ইউনিয়নসহ উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের ফসল রক্ষা করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ওই বোর্ড স্থাপন করলেও, কোন ইউনিয়নের কৃষকরা এক মুহুর্তের জন্যও এর সুফল ভোগ করতে পরেনি।

জানা যায়, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা ও সঠিক সময়ে চাষাবাদের জন্য আগাম তথ্য দিতে প্রকল্প গ্রহণ করে ডিএই এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড ও রেইন গেজ মিটার। এটি পরিচালনার জন্য ওই সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত প্রত্যেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে আবহাওয়া বিষয়ক সফটওয়্যারসহ প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়া হয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারিভাবে প্রতি মাসে ইন্টারনেট প্যাকেজও দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি ভবনের একটি দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড। তবে বোর্ডে হালনাগাদ তথ্য নেই। অনেক ইউপিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বোর্ডের নিচের অংশের ডানপাশে কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও সেখানে কোন মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতি বছরই কৃষকে ফসলের ক্ষতি হয়। কিন্তু পরিষদ থেকে আগাম কোন তথ্য পাচ্ছেনা কৃষক। আবহাওয়ার আগাম তথ্য পেলে কৃষকরা আগাম সতর্ক হতে পারতেন। তাতেকরে কৃষকের ফসলের কোন ক্ষতি হতো না বলে অনেকে জানান।

ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা কোনদিন এই মেশিনের নাম শুনি নাই। আমরা আকাশের অবস্থা দেখে বা টিভিতে খবর দেখে জমি চাষ করি এবং ফসল ফলাই। কৃষকদের মাঝে আবহাওয়ার আগাম তথ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার এমন একটি উত্তম উদ্যোগ নিয়েছে, অথচ আমরা এবিষয়ে কিছুই জানি না। তবে, এই সেবা চালু থাকলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হতো বলে তিনি মনে করেন। এটার কী ধরনের কার্যক্রম সে বিষয়েও কৃষি বিভাগ থেকে কখনো কিছু জানানো হয়নি বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প থেকে কোন মেইনটেনেইন্স নাই। ওরা শুধু স্থাপন করে দিয়ে গেছে। এবিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন আমরা যদি সুস্পষ্ট নির্দেশনা না-পাই তাহলে কিভাবে? কোথায়? কখন? কি কাজ করব? এমন অনেক কিছু। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন যে, আজ পর্যন্ত এইবোর্ড থেকে কোন প্রকার রিপোর্ট সুবিধা জনগণন পায়নি।

কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এর ডিসপ্লে বোর্ডে আবহাওয়ার ৩ দিন আগের ও ৩ দিন পরেরসহ মোট ৬ দিনের পূর্বাভাস দেয়া থাকবে। এটা উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ঠ উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা আপডেট করার কথা। এর জন্য উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়া বিষয়ক সফটওয়্যারসহ প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়া হয়েছিলো। ২০১৮ সালে স্থাপনের এটা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এখন এটা সম্পূর্ণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এখতিয়ার। স্থাপনের পরে আর কোন দায়িত্ব নেই এই প্রকল্পের এমনটাও প্রকল্পের অনেকে জানান। কিন্তু কৃষি বিভাগ বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তারা বলছেন আমরা এবিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাইনাই। তাহলে কিভাবে? কোথায়? কখন? কি কাজ করব? এমন অনেক কিছু। তবে এর বিন্দুমাত্র সুফল ভোগ করতে পারেনি যাদের উদ্দেশ্যে এতো টাকা ব্যয়; এমনটাই জানান কৃষকসহ ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট অনেকে।

এই প্রকল্পের যন্ত্রাংশ বা মালামাল (রেইন গেজ মিটার, সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, ডিসপ্লে বোর্ড) কোথায় গেল? কার বাসা বাড়িতে শোভা পাচ্ছে? এসব খোঁজে দেখা দরকার বলে অনেকে মনে করছেন। তা-না হলে সরকারের উন্নয়ন মূলক এমন প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, যা কারো কাম্য নয়। তাছাড়া যেকোন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের যন্ত্রাংশ বা মালামাল নির্ভয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে যেকেউ। এতে করে সরকারের যেকোন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হতে পারে, পক্ষান্তরে ব্যয় হবে টাকা ও সময় এমনটা মনে করছেন সুশীলজনসহ অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।