২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুকসহ অন্যান্যরা কেমন আছেন? কিভাবে চলছে তাদের দিন-রাত? পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে দিনাতিপাত করছেন পঙ্গুত্ব বরনকারী ও গুরুতর আহত হওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্র লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ? এসবের খোঁজে বিশেষ প্রতিনিধি দল কয়েক দিন যাবৎ নিরলস মাঠে কাজ করছে।
আজ এমন প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে সন্ত্রসী হামলার শিকার মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুকসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের খোঁজ খবর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখেছেন প্রতিনিধি দলের সাংবাদিকগন। যা অতিসংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হলো–
আজ ৪ সেপ্টেম্বর; বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী কর্তৃক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ২১ বছর পুর্তি হলো। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের এই দিনে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তাকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে সারা শরীর করা হয় ক্ষত-বিক্ষত। একটি হাত কেটে দেওয়া হয়। তখন ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন বতর্মান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক হীরা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মনির হোসেন। ফারুক ছাত্রলীগের কলেজ শাখা কমিটির সহ-সভাপতি যখন সভাপতি হিসেবে সারোয়ার ইসলাম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন সাইফুল ইসলাম। তাছাড়া ছাত্রলীগের স্কুল শাখা কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক। তখন সভাপতি হিসেবে ছিলেন বতর্মান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক এফএম কামরুল আলম রঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম তালুকদার ভূট্টো।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতনের স্বীকার মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুকের দেওয়া তথ্য মতে, ২০০২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসী একটি দল নকলা সাবরেজিষ্টার অফিসের সামনে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে ফারুকের ওপর হামলা চালায়। তাকে রাম দা দিয়ে কুপাতে থাকে। নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে হাসপাতাল মোড়ে জসিম উদ্দিন মাস্টারের বাসার সামনে গিয়ে ফারুক রাস্তায় লুটিয়ে পরেন। সেখানে তাকে এলোপাথারি কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত মনেকরে বাবু, নবীজুল, কাসেমসহ সন্ত্রাসী দলটি ফিরে যায়। ফারুকের নিশ্চিত মৃত্যুতে সন্ত্রাসীদের যেন একটি মূল টার্গেট পূর্ণ হয়; তারা উল্লাস করতে করতে বাসায় ফিরে।
পরে আওয়ামীমনা নির্ভীক স্থানীয়রা ফারুককে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় একমাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন ফারুক। তবে গুরুতর আহত ফারুকের বাম হাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বেশ শঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসকগন। কিছু দিনের মধ্যেই চিকিৎসকগনের শঙ্কা সত্যি হতে শুরু করে। ফারুকের অপারশেন করা বাম হাত অস্বাভাবিক ভাবে শুকিয়ে যেতে থাকে। পরে কয়েক জনের পরামর্শে তাকে কমিউিনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দ্বিতীয় বারের মতো বাম হাতে অপারশেন করা হয়। এতে তার বাম হাতটি বেঁচেগেলেও নেই কোন কার্যক্ষমতা। তার বাম হাতে কোন শক্তিবল নেই। পঙ্গুত্ব নিয়েই তাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
এবিষয়ে নকলা থানায় মামলা করতে গেলে বিএনপি-জামাত সরকারের সন্ত্রাসী নেতৃবৃন্দের ভয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা নিতে অপারগতা স্বীকার করেন। পুলিশের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ফারুকের পরিবারের লোকজনকে দ্রুত থানা থেকে বেড় করে দেওয়া হয়। এদিকে চিকিৎসা ব্যয় ও বিএনপি-জামাত সন্ত্রাসীদের চতুর্দিক থেকে হুমকি-দামকিসহ মনিসক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন ফারুক ও তার পরিবারের লোকজন। জান-মালের ভয়ে দিনাতিপাত করতে হয় ফারুকের শুভাকাঙ্খীসহ ফারুক ও তার পরিবারের লোকজনদের।
২০০১ সালের ১০ অক্টোবর উপজেলার উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা এলাকায় বিএনপি-জামাত সন্ত্রাসীদের হামলার কবলে পরেন আবু ও রাজুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তাছাড়া ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের অশীষ কুমার ও কাজলসহ নাম না-জানা অনেকের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। বিএনপি-জামাত সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপুর এলাকার শহিদুল ইসলামসহ অনেকে। শাহ মো. মোজাম্মেল হক স্যারের বাড়িসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় অনেক বাড়ীঘর। ওইসব ন্যাক্কার জনক কাজের জন্য নকলার জনগন বিএনপি-জামাতকে ঘৃণা করে। যার ফলশ্রুতিতে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাূড়ী) আসনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে। আগত জাতীয় নির্বাচনেও এই আসনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ (নৌকা) বিজয়ী হবে বলে জানান বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে নির্যাতিত আওয়ামী লীগ পরিবারের অনেকে। নির্যাতিত আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেকে অক্ষেপ করে জানান, বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। অজ্ঞাত কারনে আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে রাখা হচ্ছে বলে তারা মন্তব্য করেন।