শেরপুরের নকলায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত দেশবরেণ্য সাংবাদিক, দৈনিক সংবাদ সম্পাদক, নকলার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান-এঁর ৮২তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে নকলা প্রেসক্লাব পরিবারের উদ্যোগে ও আয়োজনে প্রেসক্লাব কার্যালয়ে প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর হোসেন এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- সিনিয়র সাংবাদিক নকলা প্রেস ক্লাবের সদস্য আলহাজ্ব মাহবুবর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাধারন সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, যুগ্মসাধারন সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন, ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ও দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা প্রমুখ।
এসময় নকলা প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রিজন, তথ্যও গবেষণা সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ, কার্যকরী সদস্য শীমানুর রহমান সুখন ও সদস্য রেজাউল হাসান সাফিতসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা দেশবরেণ্য সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান-এঁর সাংবাদিকতাসহ তাঁর পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কৃতকর্মের উপর আলোচনা করেন। তাঁরা জানান, বজলুর রহমান ১৯৪১ সালের ৩ আগষ্ট তারিখে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার চরনিয়ামত গ্রামের আব্দুর রহমান মৌলভীর ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন।
সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, দৈনিক সংবাদ সম্পাদক বজলুর রহমান-এঁর জন্ম ফুলপুর উপজেলায় হলেও তাঁর বেড়েউঠা শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামে।
বক্তারা আরো জানান, বজলুর রহমান ফুলপুর উপজেলার স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করার পরে শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্টিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হন। পরে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে ও বরিশালের বজ্রমহন কলেজে পড়া লেখা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে কচি কাচাদের শিশু সংগঠন খেলা ঘর নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেন। তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের অন্তত ৩০টি জেলায় ‘খেলা ঘর আসর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বজলুর রহমান ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ৫৮ সালের শিক্ষা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অত:পর পর্য়ায়ক্রমে ৬২’র সংবিধান, ৬৬’র ৬দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুথান, ৭০’র সাধারণ নির্বাচন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এসকল আন্দোলনে ও দিবস গুলিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
তাছাড়া প্রথিতযশা সাংবাদিক বজলুর রহমান তাঁর লেখায় সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে দেশ বিরোধীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন সংবাদের এক সাহসী কলম সৈনিক। বজলুর রহমান মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে লেখালেখি করে পরামর্শ মূলক লেখনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরেছেন। নরসিংন্দী জেলার ব্যারিস্টার আহমেদুল কবিরের দৈনিক সংবাদে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। ৯৬ এর পরে নিজে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। তার লেখনীর ধারা মুক্তিযোদ্ধকে বেগবান করেছিলো, অনুপ্রাণিত হয়েছিলো হাজারো মুক্তিকামী জনগন।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখা বজলুর রহমান ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত সাতটার সময় পুরান ঢাকার অরলেস গেইটে সাবেক কৃষি মন্ত্রী, জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী’র সরকারি বাসভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকার কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানের বিশেষ কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ ফেব্রুয়ারীতে তাঁর মৃত্যু হয়। নকলা উপজেলার নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা নামাজ শেষে ঢাকায় আরও একটি জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাঁর মরদেহ কবরস্থ করা হয়।