মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নকলায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে র‌্যালী আলোচনা সভা উপজেলা প্রকৌশলী আরেফিন পারভেজকে বিদায় সংবর্ধনা রক্তসৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র নকলা উপজেলা শাখার কমিটি গঠন কল্পে আলোচনা সভা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শফিকের মরদেহ ৫৯ দিন পর কবর থেকে উত্তোলণ নকলায় গরুচুরি বৃদ্ধিতে আতঙ্কে কৃষক! টহল পুলিশের কার্যক্রম জোরদারের দাবি নকলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন নকলার নতুন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে জুয়েল মিয়াকে পদায়ন নালিতাবাড়ীতে উইন ২০৭ ধান’র নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস শেরপুরে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা নকলা স্ববল প্রজেক্ট’র স্থানীয় নেতৃত্বে মাল্টি স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন বিষয়ক কর্মশালা

নকলায় কাসাবা চাষে আশার আলো

রিপোর্টারঃ
  • প্রকাশের সময় | শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩
  • ২৪৮ বার পঠিত

শেরপুরের নকলা উপজেলায় অনুর্বর পতিত জমিতে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাসাবা (স্থানীয় নাম শিমুল আলু) চাষের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে কাসাবা হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় কন্দাল ফসল। কাসাবা চাষে কৃষকের আশা পুরন হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ অনেকে।

কাসাবা গাছের ধরন দেখে ও বাজারে ভালো দাম থাকায় উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কবুতরমারী ব্লকের বানেশ্বরদী খন্দাকারপাড়া গ্রামের কাসাবা চাষী মোস্তাফিজুর রহমানের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। নকলায় এই কন্দাল ফসল কাসাবা চাষের অপার সম্ভাবনার কথা বলছে কৃষি বিভাগ। নাম মাত্র শ্রমে ও ব্যয়ে বাড়তি আয়ের মাধ্যম হতে পারে এই কাসাবা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য এবং উৎপাদনের দিক থেকে গম, ধান, ভুট্টা, গোল আলু ও বার্লির পরই কাসাবার স্থান।

কাসাবা গাছের পাতা দেখতে অনেকটাই শিমুল গাছের পাতার মতো। এ গাছ ৪ ফুট থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। চারা রোপনের ৬ মাস পরে মাটির নিচে গাছের গুড়ালি থেকে চারপাশ দিয়ে আলু (টিউবার) ধরে। আলু গুলো দেখতে অনেকটাই মিষ্টি আলুর মতো, তবে মিষ্টি আলুর চেয়ে বেশ বড় হয়। যা লম্বায় এক ফুট থেকে দুই ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার অনুর্বর জমিতে বেশ আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কাসাবার চাষাবাদ করা হচ্ছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে নকলায় এই প্রথম পরীক্ষা মূলক বানিজ্যিক ভাবে কাসাবা চাষ শুরু করা হয়।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে কাসাবা চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভাবে উপজেলাতে ৫টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই কাসাবা আবাদ করা হয়েছে বলে কৃষি অফিসার জানান। প্রতিটি প্রদর্শনীতে ২০ শতাংশ করে জমিতে কাসাবা রোপনের কথা থাকলেও, কৃষকদের নিজ উদ্যোগে প্রতিটি প্রদর্শনীতে ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বা এরচেয়েও বেশি জমিতে কাসাবা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া নিজের বাড়ীর আঙ্গীনায় ও অনুর্বর পতিত জমিতে অনেকে শখ করে কাসাবা লাগিয়েছেন। এতে সব মিলিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হেক্টর জমিতে কাসাবার আবাদ হয়েছে বলে অনেকে ধারনা করছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ২০ টন থেকে ২৫ টন কাসাবা উৎপাদন করা যায়। কাসাবা চাষের জমিতে যাতে বন্যা অথবা বৃষ্টির পানি না জমে এর জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কাসাবা যদিও খরা সহনশীল গাছ তথাপি বার বার চাষে এর ফলন কমে যায়। এক গবেষণার তথ্য মতে জানা গেছে, খরা মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর কাসাবা খেতে সেচ দিলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহীন রানা জানান, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুই জাতের কাসাবার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড থেকে এসেছে। একটি অনেকটা লাল রঙের, অন্যটি সাদাটে। তবে নকলায় এবছর যে কাসাবা চাষ করা হয়েছে তা স্থানীয় উন্নত জাত। তিনি বলেন, পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষ করা কাসাবার গাছের ধরন দেখে নিশ্চিত করেই বলা চলে নকলার মাটি এই ফসল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কাসাবার বংশ বিস্তার সাধারণত স্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। আট থেকে ১২ মাসের দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পুরু রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত কাণ্ড চারা তৈরির জন্য আদর্শ। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে রোগ মুক্ত কাণ্ড সংগ্রহ করে ধারালো ছুরি অথবা ডাবল সিকেসা দিয়ে এক বা দুই পর্ববিশিষ্ট ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট কাণ্ড পলি ব্যাগে বা সয়েল বেডে পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরতায় ৪৫ ডিগ্রী কোণে দক্ষিণ দিকে হেলিয়ে রোপন করতে হয়।

কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহীন রানা বলেন, কাসাবা হচ্ছে উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কন্দাল জাতীয় ফসল। দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য খাটতি মোকাবেলায় কাসাবা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কাসাবাসহ যেকোনো কৃষি কাজের জন্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার ব্যবহার করা ও নিয়মিত পরিচর্চা। তাতে একদিকে উৎপাদন খরচ কমে, অন্যদিকে ফলন বাড়ে। কাসাবা চাষে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে। অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল পাওয়া যায়। এটি একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় অর্থকারী ফসল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, অন্য ফসলের চেয়ে কাসাবা চাষে খরচ কম; কিন্তু লাভ বেশি পাওয়া যায়। এতে প্রয়োজনীয় কিছু সেচ দেওয়া ছাড়া তেমন কোন সার ও কীটনাশক লাগেনা। এ ফসল চাষে বাড়তি কোন পরিচর্যার দরকার হয়না। তিনি বলেন, কাসাবা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত কর্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কন্দল জাতীয় ফসল। পরিষ্কার কাসাবা খাদ্য হিসেবে কাঁচা বা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায়; যা দিয়ে রুটি, বিস্কুট, চিপসসহ নানাবিধ খাবার তৈরি সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী আরো জানান, নকলায় এবার প্রথম বারের মতো বানিজ্যিক ভাবে কাসাবা চাষ করা হয়েছে। লাভজনক এ কাসাবা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বুঝাতে পারলে ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে চাষিদের মাঝে আগ্রহ বাড়বে। এতে করে ভাতের উপর চাপ কমবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। পতিত অনুর্বর জমিতে কাসাবা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সহজ। তাই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।