মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলো ঈদ-উল-আযহা। দিন যত যাচ্ছে, ঈদ ততই গণিয়ে আসছে। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-আযহা। সবাই নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী কোরবানীর পশু কিনতে ব্যস্ত। ঈদ উপলক্ষে কৃষক ও খামারিরা ব্যস্ত তাদের আদরের পশু গুলো উপযুক্ত দামে বিক্রি করা নিয়ে।
এমন এক খামারির সন্ধ্যান দিলেছে নকলা উপজেলার পাঠাকাটা উইনিয়নের পলাশকান্দি গ্রামে। তার পালিত সাদা-কালো রংয়ের একটি ষাড়ের ওজন প্রায় ৪০ মণ; যার দাম হাঁকা হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। টাইগার বাবু জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানীর পশু বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাগন।
খামরি লিঞ্জু ইসলাম লিখন (ডাক নাম বাবু) বলেন, ষাঁড়টির নাম মূলত রাখা হয়েছে টাইগার, তবে আমার ডাক নাম বাবু হওয়ায় সবাই ষাঁড়টিকে টাইগার বাবু বলে চিনেন। টাইগার বাবুকে বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েকটি বাজারে তোলে ছিলাম; কিন্তু কাঙ্খিত দরদাম না হওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। টাইগার বাবু খুব শান্ত স্বভাবের। দুই বছর আট মাস বয়সী এই টাইগার বাবুর প্রতি পরিবারের সবার খুব আদরের। তাকে কোন দিন কোন প্রকার ক্ষতিকর কিছু খাওয়ানো হয়নি। নেপিয়ার ঘাস, গম ও ভূট্টার ভূষি, খৈইল, সামান্য চিটাগুড় মিশ্রিত পানি ও সামান্য খড় ছাড়া সে আর কিছু খায়না। তাছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এবং সরকার অনুমোদিত ওষুধ ব্যবহার ও নিরাপদ খাদ্য খাওয়ানোর বাইরে আজ পর্যন্ত আর কোন কিছু তাকে খাওয়ানো হয়নি।
লিখন আরো বলেন, ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই বেশি দামের আশায় ষাঁড়কে মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি এসবর চিন্তাও করিনাই। টাইগার বাবুর চেহেরা ও টান টান চামড়া দেখেই তা সবাই বুঝতে পারেন। ছয় দাঁতের বিশাল এ ষাঁড়ের খাবার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন ১,১০০ টাকা থেকে ১,৩০০ টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে তার। এমতাবস্থায় তাকে বিক্রি কার জরুরি বলে এলাকাবাসী পরার্মশ দিয়েছেন। তাই এই । ঈদে টাইগার বাবুকে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছি। এলাকার অনেকে ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা দাম করেছেন। কিন্তু তা ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় বিক্রি করিনি। এখন রাজধানী ঢাকাতে নিয়ে বিক্রি করতে হবে বলে তিনি মনে করছেন।
নকলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসহাক আলী জানান, টাইগার বাবুর মালিক আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তার ডাকে দ্রুত সাড়া দিয়ে আসছি। সময় মতো সব ধরনের পরামর্শ সমূহ খামারী লিখন হুবহু মেনে চলায় নকলার টাইগার বাবু এখন জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সরেজমিনে যে কেউ দেখলেই টাইগার বাবুকে পছন্দ করবে। ভালো বা কাঙ্খিত দামেই বিক্রি করা সম্ভব বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পশুর দাম ভালো থাকায় এবছর প্রতিটি খামারি লাভবান হবেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কোরবানীর জন্য যারা বড় গরু প্রস্তুত করছেন, আমরা তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলায় প্রায় ৩০ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে এক জরিপের বরাতে তিনি জানান। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হবে। এতে শেরপুরে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার কোরবানীর পশু বিক্রি হবে বলে তিনি ধারনা করছেন।