ঐতিহ্যবাহী শেরপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত তথাকথিত কতিপয় গণমাধ্যমকর্মীদের অযৌক্তিক ভাবে সদস্যপদ দাবি আদায়ের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারাকারীদের অসৌজন্যমূলক ও ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
তাছাড়া ওই নিন্দনীয় ঘটনায় জড়িত কার্যনির্বাহী পরিষদের ২ জনসহ কয়েকজন সদস্যকে সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডের দায়ে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বুধবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় ক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা, সহসভাপতি এস.এম শহিদুল ইসলাম ও আছাদুজ্জামান মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জল ও মহিউদ্দিন সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক দত্ত, সিনিয়র সদস্য এম.এ হাকাম হীরা, দেবাশীষ সাহা রায়, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মারুফুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সোহেল রানা, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ইমরান হাসান রাব্বী, প্রচার সম্পাদক জুবাইদুল ইসলাম, সদস্য রেদওয়ানুল হক আবীর তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় ক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমান উদ্ভুত অবস্থায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, আমাদের দায়িত্বের ২ মেয়াদে ক্লাবের গঠনতন্ত্রের কোন সংশোধন করা হয়নি। আর গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নির্ধারিত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যেই নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই। যারা নির্বাচনকে ভয় পায় তারাই নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে। আগামী ১০ জুনের মধ্যে সদস্য নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সাধারণ পরিষদের সভা আহ্বান করা হবে। সাধারণ পরিষদের সভাতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে একমত পোষণ করে সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ইতিপূর্বে সুনিদৃষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাহী পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তথাকথিত কতিপয় গণমাধ্যমকর্মীদের কালো তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ সভায় তাদের সহযোগী সদস্য না করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরেও তাদের সহযোগী সদস্যপদ দেওয়ার দাবি আদায়ের নামে আমাদের নির্বাহী পরিষদের দুইজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন কথিত গনমাধ্যমকর্মী সাধারণ সদস্য বহিরাগত কিছু লোকজন নিয়ে ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের নামে যে বিশৃঙ্খলার পায়তারা করেছেন, তা নিন্দনীয় ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ বটে।
ক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, শেরপুর প্রেসক্লাবে আমরা দায়িত্বে থাকার সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু-এঁর ছবি ওঠানোর সময় যারা বিরোধিতা করেছিলো, এখন তারাই বঙ্গবন্ধু’র সৈনিক সেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছেন; যা কারোরই প্রত্যাশা নয়। তিনি আরো বলেন, প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগন গঠনতান্ত্রিক নিয়ম মেনেই সদস্য নবায়ন ও আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে নবাগত সাংবাদিকদের সহযোগী সদস্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা ক্লাবের সাধারণ পরিষদের সভা আহ্বানসহ কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচনের দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সুন্দর পরিবেশকে অসুন্দর করতে যারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারাকারীদের অসৌজন্যমূলক ও ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
একই কথা প্রকাশ করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা বলেন, নির্বাহী পরিষদের কর্মকর্তা হয়েও যারা কালো তালিকাভূক্তদের পুনর্বাসনের চেষ্টার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, তারা অভ্যাসগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। তারা ক্লাবের ঐতিহ্যসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হরহামেশাই নামে-বেনামে অভিযোগ দিয়ে তোপের মুখে পড়লেও পার পেয়ে যাচ্ছে বলেই থামছে না। কাজেই এদের আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ২ কর্মকর্তা ছাড়া সভায় উপস্থিত প্রায় সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।
এছাড়া রাষ্ট্রের চতুর্থ শক্তি বা স্তম্ভ ও সমাজের দর্পন হিসেবে খ্যাত শেরপুরের সাংবাদিকদের সুগঠিত ও শক্তিসালী সংগঠনকে কলঙ্কিত করায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও নিন্দনীয় ওই ঘটনার তীব্রনিন্দা জানানো হয়েছে। যা আমাদের ঐতিহ্যবাহী শেরপুর জেলার ও শেরপুর প্রেসক্লাবের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে জেলার সর্বস্তরের জনগন মনে করছেন। তাই এমন নিন্দনীয় ঘটনা যেনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার এখনই সময় বলে অনেকে মনে করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে বিকেলে কালো তালিকাভুক্ত তথাকথিত কতিপয় গণমাধ্যমকর্মী অযৌক্তিক ভাবে সদস্যপদ দাবি আদায়ের নামে বেআইনি ভাবে শেরপুর প্রেসক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের জড়িয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারা করেন। খবর পেয়ে বর্তমান ও সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যরা ন্যায় সঙ্গত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।