শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ছিটপাড়া এলাকা। এখানেই অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে কাগজের ছাউনির ঝুপড়ি ঘরে ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ভিটেমাটিহীন বিধবা পারভীন বেগম। দরিদ্র এই নারীর ঘরে একটি বাল্ব জ্বললেও নিজের নামে বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। অথচ সেই পারভীনই বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় ফেঁসে জেল খেটেছেন এক মাস। এরপর জামিনে বেরিয়ে ধারদেনা করে গত জানুয়ারিতে বকেয়া বিদ্যুতের সব টাকা পরিশোধ করলেও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রত্যয়ন আদালতে না পৌঁছায় আবার জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। গত ১৬ মে পুলিশ পারভীনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
স্থানীয়রা জানান, পারভীন ছিটপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীনের মেয়ে। নিরব হোসেন নামে তাঁর ১৫ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। নিরব যখন গর্ভে তখন মারা যান পারভীনের স্বামী মো. শাহীন। এরপর গৃহকর্মীর কাজ করে জীবন চালাতেন পারভীন। নিজের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ছোট বোন আকলিমার বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে সাত বছর আগে বসবাস শুরু করেন। আকলিমার স্বামী মনির হোসেন কাতারপ্রবাসী। আকলিমাও থাকেন ঢাকায়। তাই গ্রামে নিজ বাড়ির আঙিনার পাশে আকলিমা বোনকে থাকতে দিয়েছিলেন। পারভীন নিজে গৃহকর্মী ও ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নথি থেকে জানা গেছে, বিদ্যুতের বকেয়া বিলের মামলায় পারভীন ও তাঁর ভগ্নিপতি মনির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগটি মনির হোসেনের নামে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৯৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ওই বছরের ২৪ মার্চ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু বিল পরিশোধ না করে পারভীন নিজ উদ্যোগে সংযোগ লাগিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এক হাজার টাকা ক্ষতি করায় বিষয়টি নিয়ে মামলা করেন পিডিবি নালিতাবাড়ীর আবাসিক প্রকৌশলী সুশান্ত পাল। মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে অন্তত এক মাস কারাভোগ করেন পারভীন।
স্থানীয়রা আরও জানান, জামিনে বের হয়ে ধারদেনা করে ২০২২ সালের ১৫ জুন ও গত ১১ জানুয়ারি দুই দফায় বিদ্যুৎ বিভাগের সব টাকা পরিশোধ করেন পারভীন। টাকা পরিশোধের পর ১৫ জানুয়ারি পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। তাতে বিদ্যুৎ বিল ও ক্ষতির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেই প্রত্যয়ন আদালতে পৌঁছায়নি। ফলে গত ১৬ মে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ পারভীনকে আবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে পারভীন অসুস্থ হয়ে পড়লে পর দিন তাঁকে প্রথমে শেরপুর জেলা হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে গত রোববার আবার পারভীনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পারভীনের ছেলে নিরব হোসেন বলেন, ‘অনেক কষ্টে টাকা পরিশোধ করলেও মা জেলে আছে। উকিল ৫ হাজার টাকা চেয়েছে। টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় কাগজ জমা দিতে পারছি না। বিদ্যুৎ বিভাগও কাগজটি আদালতে দেয়নি।’
পিডিবির নালিতাবাড়ী আবাসিক প্রকৌশলী সুশান্ত পাল বলেন, ‘নিজ দায়িত্বে প্রত্যয়নপত্রটি আদালতে জমা দিলে আবার তাঁকে জেলে যেতে হতো না। প্রত্যয়নপত্র জমা হয়নি জানলে আমরাও সেটি জমার ব্যবস্থা করতে পারতাম।’
জনউদ্যোগ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘এখানে উভয়পক্ষের কিছুটা গাফিলতি আছে। বিষয়টি নিয়ে সবার সচেতন হওয়া দরকার।’
-সূত্র: দৈনিক সমকাল।