আজ ১৭ মে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এঁর ৪৩তম ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। এ ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষে শেরপুরের নকলায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে জাতীয় এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দলীয় পতাকা উত্তোলণ করা হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করা হয়।
এদিন বিকেলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন প্রাঙ্গণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আম্বিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফেরদৌসুর রহমান জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুল আলম আলমগীর আজাদ ও দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সোহেল, উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মন্নাফ খান, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু শ্যামল সূত্র ধর, উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু হামযা কনক প্রমুখ।
এসময় উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ, মৎসজীবী ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে পাকিস্তানি নর ঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এসময় বিদেশে থাকায় আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী।
বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমনি ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতক গোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখো মানুষের মিছিলকে গতিরোধ করতে পারেনি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব’, ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে দেশ ও জনস্বার্থে তিনি নিরলস কাজ করে চলছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এঁর হাতকে শক্তশালী করার কাজে অংশ নেওয়ার আহবান জানান তারা।