আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রাপ্ত নকলার কৃতি সন্তান সাংবাদিক বজলুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এই দিনে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক দৈনিক সংবাদ সম্পাদক বজলুর রহমানের মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন নানান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
বজলুর রহমান তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার চরনিয়ামত গ্রামের আব্দুর রহমান মৌলভীর ঘর আলো করে ১৯৪১ সালের ৩ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করার পরে নকলা উপজেলার গণপদ্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্টিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হন। পরে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে ও বরিশালের বজ্রমহন কলেজে পড়া লেখা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বজলুর রহমান সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে কচি কাচাদের শিশু সংগঠন খেলা ঘর নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেন। তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের ৩০টি জেলায় খেলা ঘর নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ৫৮ সালের শিক্ষা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অত:পর পর্য়ায়ক্রমে ৬২’র সংবিধান, ৬৬’র ৬দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুথান, ৭০’র সাধারণ নির্বাচন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এসকল আন্দোলনে ও দিবস গুলিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
তাছাড়া প্রথিতযশা সাংবাদিক বজলুর রহমান তাঁর লেখায় সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে দেশ বিরোধীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন সংবাদের এক সাহসী কলম সৈনিক। বজলুর রহমান মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে লেখালেখি করে পরামর্শ মূলক লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। নরসিংন্দি জেলার ব্যারিস্টার আহমেদুল কবিরের সংবাদে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। ৯৬ এর পরে নিজে সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার লেখনী ধারা দেশ মুক্তিযোদ্ধে অনেক এগিয়ে যায়।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখা বজলুর রহমান ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাতটার সময় পুরান ঢাকার অরলেস গেইটে সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সরকারি বাসভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকার কার্ডিয়াক হাসপাতালে বিশেষ কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া অবস্থায় ২৬ ফেব্রুয়ারীতে তাঁর মৃত্যু হয়। নকলা উপজেলার হাইস্কুল মাঠে জানাযা নামাজ শেষে ঢাকায় আরও একটি জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে শেরপুরের নকলা প্রেস ক্লাবসহ সারাদেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।