একজন হতাশাগ্রস্থ ও কর্মব্যস্ত আত্মহত্যা প্রবণতা সম্পন্ন মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে কুশলাদি বিনিময়, ভালোবাসার ভাব বিনিময় ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমেই আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন ‘সুইসাইড প্রিভেনশন ইয়ুথ সোসাইটি’ নামক এক যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র বদরুল মোর্শেদসহ এ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকগন।
আর এই বিশ্বাস থেকেই ‘সুইসাইড প্রিভেনশন ইয়ুথ সোসাইটি’ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে নানাবয়সী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কুশলাদি ও ভালোবাসা বিনিময়ের কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন কারনে হতাশাগ্রস্থ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ প্রচারণা কার্যক্রম চালানো হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা যুব সংগঠন সুইসাইড প্রিভেনশন ইয়ুথ সোসাইটি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গনে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ফয়সাল আহমেদের তত্ত্বাবধানে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে সংগঠনের পরিচালক সিদ্দিকুন সিমলার তত্ত্বাবধানে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র বদরুল মোর্শেদের তত্ত্বাবধানে চিঠির মাধ্যমে ভালবাসা ও কুশলাদি বিনিময়সহ মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি কর্মসূচি পালন করা হয়। এসক কর্মসূূচিতে সংগঠনটির নির্বাহী সদস্য সুজন, নজরুল ইসলাম ও মুসকান আহমেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সংগঠনের বাগেরহাট শাখার উদ্যোগে আবিদা খান ও শারমিন হিরামনি, ময়মনসিংহের দুইটি স্থানে জাফরিন আক্তার সাথি ও খোবায়েদ আহমেদ ও নারায়ণগঞ্জে কাজল রেখার তত্ত্বাবধানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এদিন এমন ব্যতিক্রমী কর্মসূচির লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো- বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর কর্মব্যস্ত প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তি জীবনে কেমন আছেন এবং নিজেকে নিয়ে কে কতখানি ভাবছেন তা জানার চেস্টা করা। তাছাড়া আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা।
বিশ্ব ভালোবাসার দিবসের মতো বিশেষ দিনে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র বদরুল মোর্শেদ বলেন, আমাদের দেশের কর্মব্যস্ত অধিকাংশ মানুষ নিজের প্রতি প্রয়োজনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খেয়াল রাখেন। তাছাড়া আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিজেদের করণীয় ও নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তুলনামূলক কম সচেতন। তাই আমরা ভালবাসা দিবসে কর্মব্যস্ত বিভিন্ন পেশা-শেণি মানুষের সাথে কুশল বিনিময় ও ভালবাসার ভাব বিনিময়ের লক্ষে এমন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এতে করে মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা হলেও সচেতন হতে পেরেছেন। প্রতিটি মানুষের নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ছে ও মনে সাহসের সঞ্চার হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কবি, সাহত্যিক, সাংবাদিক, সুধীজন ও বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির জনগনকে এই কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে চিঠির মাধ্যমে ভালবাসার ভাব বিনিময়সহ সবার সাথে কুশল বিনিময় ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করেছে সুইসাইড প্রিভেনশন ইয়ুথ সোসাইটি।
সুইসাইড প্রিভেনশন ইয়ুথ সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের ভালোবাসার প্রতীক স্বরূপ চিঠির মাধ্যমে কুশল বিনিময়ের সুযোগ পেয়ে চিঠি প্রাপ্ত প্রতিটি মানুষ খুশি হয়েছেন, হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। তাদের মনে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন জেগেছে, সাহসের সঞ্চার হয়েছে প্রতিটি মানুষের মনে।
বদরুল মোর্শেদ আরো জানান, যেকোন মাধ্যমে কারও হতাশাজনক স্ট্যাটাস দেখলে ও মেনশন পেলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ওই হতাশাগ্রস্থ ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজন হলে তার সঙ্গে দেখা করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাকে সাহস যোগান। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কথা মনোযোগ সহকারে শুনে এর সুষ্ঠু সমাধান বের করার চেষ্টা করেন এবং অধিকাংশ সমস্যা সমাধান করেন। তাৎক্ষণিক সরাসরি যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে, তাকে ফোন কল বা ও ভিডিও কলের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করেন তারা। হতাশাগ্রস্থ লোকের কথা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন এই সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।
এই সংগঠনের সদস্যরা ফেসবুকে নিজ নিজ টাইম লাইনে, পাবলিক গ্রুপে ও ফেইজবুক পেইজের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক পোস্ট শেয়ার করেন। এছাড়া ক্যারিয়ার গঠন, প্যারেন্টিং, পারিবারিক শিক্ষা ও সন্তান পালনে করণীয় শীর্ষক ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকগন। এ সংগঠনের সুনাম দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশ ব্যাপি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মহত্যা প্রবনতা রোধে এসকল ব্যতিক্রমী কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়ে আসছেন সুশীলজনসহ বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির মানুষ।