রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নকলায় গৃহহীন জামাল উদ্দিন ২০ বছর ধরে রাত কাটান মসজিদে শেরপুর সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, দ্রুত বিচার দাবী নকলায় টিসিবি পণ্যের ‘স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ চলছে কীটনাশক ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কৃষক! নকলায় তারুণ্য উৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ পৃথিবীর একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি বিলুপ্তির পথে নকলায় এসএসসি-৯৫ ব্যাচের মিলনমেলা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা শেরপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’র কমিটি গঠন নকলায় শাক সবজি চারার হাটে বেচাকেনার ধুম নকলায় দিন দিন তুলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এখন তুলা যেন সাদা সোনা

ইউটিউব দেখে নকলার উজ্জল মাশরুম চাষে সফল

মো. মোশারফ হোসাইন:
  • প্রকাশের সময় | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২৩০ বার পঠিত

শেরপুরের নকলায় মাশরুম চাষ করে লাভবান হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী উজ্জল মিয়া। উজ্জল উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে।

উজ্জল মিয়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে শখেরবসে বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত সবজি মাশরুমের চাষ শুরু করায় প্রথম কয়েক বছর তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকাস্থ মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সল্প মেয়াদী একটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে, প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মাশরুম চাষ করায় এখন সে লাভের দেখা পেয়েছেন। উজ্জল এরইমধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার মধ্যে একজন সফল মাশরুম চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

উজ্জল মিয়া জানান, করোনা অতিমারির সময় ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় কম দিতে হতো। এতে লাভ হতোনা। মাঝে মধ্যে দোকান ঘরের ভাড়া নিজের পুঁজি থেকে তাকে দিতে হতো। তাই বিকল্প আয়ের উৎস্য খোঁজতে গিয়ে বানিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষের দিকে ঝুঁকেন। মাশরুম চাষের পরিধি বৃদ্ধি করেন। শুরুতে ৩০টি স্পনের প্যাকেট দিয়ে তার মাশরুম চাষের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার সংগ্রহে ১৫০ টি খড়ের বড় সিলিন্ডার, যার ওজন ২ কেজি থেকে ৩ কেজি এবং ৫০০টি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কাঠের গুড়া ও তোষের ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এখন মাশরুম থেকে সব খরচ বাদে মাসে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তার আয় হচ্ছে।

মাশরুম চাষে আগ্রহী হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উজ্জল মিয়া বলেন, করোনা কালে আমি যখন দিশেহারা হওয়ার পথে, তখন চরবস্তী এলাকার কৃষিবিদ শফিউল আলম সুইম নামে এক বড় ভাই আমাকে সাহস দিয়ে মাশরুম চাষের দিকে আগ্রহী করে তুলেন। তার উৎসাহ পেয়ে সাভার থেকে স্পন বা মাশরুমের বীজ এনে নিজে স্পন প্যাকেট তৈরী করছি।

ঘরে বসে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করা যায়, তাই উজ্জলের দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ কেউ কয়েকটি করে প্যাকেট কিনে নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে সফলতার মুখ দেখছেন।

বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয় নানা জাতের মাশরুম। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে ফলানোর জন্য উপযুক্ত অয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম। অয়েস্টার মাশরুম ফলানোর পক্ষে আবার শীতকাল উপযুক্ত। বাকি দুটোর উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে, যখন ঠান্ডা কমে যায়।

এই ধরনের মাশরুম চাষ করার জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার। এগুলো হচ্ছে- স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খবার। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী। তাই চিকিৎসকরা হাই প্রোটিনযুক্ত এই মাশরুম চাষ ও খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

চাষের জন্য প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি ঝরিয়ে নিয়ে ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় একটি পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে মাশরুম বীজ বা স্পন ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত-আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিতে হয়। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে।

কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। অল্প কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে গেলে তুলা সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে। জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে। তাই মাছির আক্রমন থেকে রক্ষা করা জরুরি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, মাশরুম ‘গরীবের মাংস’ হিসেবে খ্যাত। এটি খেতে সুস্বাদু। এটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন একটি সবজি জাতীয় ফসল, যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করছেন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় এটি মানুষের নিকট সমাদৃত হয়েছে। বর্তমান বাজারে দিন দিন মাশরুমের চাহিদা বাড়ছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে এরইমধ্যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।