শেরপুরের নকলা উপজেলার নদ-নদীর চরাঞ্চলনে ও ছোট-বড় বিলপাড়ের যে দিকে দৃষ্টি যায় দিগন্তজুড়ে শুধু সরিষার মাঠ নজরে পড়ে। এবার সরিষার ফলনও হয়েছে বাম্পার। গত বছরের চেয়ে আবাদ বেড়েছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আবাদ হয়েছিলো ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। স্বাভাবিক ভাবে গত বছরের অর্জিত ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি এবছরের লক্ষ্যমাত্র হওয়ার কথা থাকলেও, সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধির ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৪ হাজার ৮৭৩ হেক্টর।
নামে মাত্র শ্রম, সামান্য পরিমাণ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, বিনাসেচে দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া সরিষার জন্য অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারনে বিশাল এই লক্ষ্যমাত্রকেও ছাড়িয়েছে।
কৃষি অফিসের হিসেব মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষা আবাদের অর্জন দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টরে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। সরিষার বর্তমান বাজার দামে কৃষকরা বেজায় খুশি। ভরা মৌসুমেও প্রতিমন সরিষা ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি হবে বলে ধারনা করছেন কৃষি অফিসারসহ সরিষা চাষীরা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) আনোয়ার হোসেন, সারোয়ার জাহান শাওন ও আশরাফুল আলমসহ অনেকে জানান, তারা নিজ নিজ কর্ম এলাকার আগাম আমন ধান চাষীদের সরিষা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাছাড়া কৃষকরা সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় তারা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে এবছর সরিষা আবাদে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়েছে; এমনকি গত বছরের চেয়ে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। আগামীতে উপজেলায় সরিষার আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করছেন।
ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সদস্য ঈসমাইল ও বেলালসহ অনেকে জানান, সরিষা একটি মধ্যবর্তী ফসল, তাছাড়া সরিষাতে উৎপাদন খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি পাওয়া যায়। তাই আগামীতে আগাম আমন ধান কাটার পরে তাদের সব জমিতে সরিষার আবাদ করবেন। কৃষকরা জানান, সরিষা উঠিয়ে ওই ক্ষেতে বোরো ধান রোপন করলে, চাষ, সার ও পরিশ্রম কম লাগে, কিন্তু ফলন ভালো হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার সরিষা আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে সরকারি কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এতে করে প্রতি কৃষক এক কেজি করে সরিণা বীজ, ১০ কেজি করে এমওপি ও ডিএপি সার প্রদান কার হয়। তিনি আরো জানান, এবছর নকলা উপজেলায় বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১১ ও স্থানীয় টরী-৭ জাতের সরিষা বেশি আবাদ করা হয়েছে। তিনি জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা, গনপদ্দী, নকলা, গৌড়দ্বার, চরঅষ্টধর ইউনিয়নসহ উপজেলার সর্বত্রই সরিষা আবাদ হলেও চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, উরফা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নে এবছর বেশি চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সরিষা চাষের উপযোগী সব জমিকে সরিষা আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরিষা চাষ করতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি হেক্টরে ১.৪ মেট্রিকটন হারে উপজেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬,৮৬০ মেট্রিকটন বা ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ মণ। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের সম্মূখিন না হলে, এবছর সরিষার উৎপাদন আরো বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করছেন।