শেরপুরের নকলায় আদালতের রায় উপেক্ষা করে সন্ত্রাসী কায়দায় বাড়ী-ঘরে ভাঙ্গচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রামপুর গ্রামের মো. মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গং এর সাথে মো. আবদুল জুব্বার গংদের সাথে জমিজমার মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিলো। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মো. মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গং সহকারী জজ আদালত নকলা, শেরপুর-এ একটি মামলা দায়ের করে। পরে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও স্বাক্ষীগনের স্বাক্ষীর ভিত্তিতে প্রকৃত মালিক মো. মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গং এর পক্ষে তথা বিবাদীগণের বিরুদ্ধে দোতরফাসূত্রে বিনা খরচায় ডিক্রি (রায়) প্রদান করেন।
এ রায়ের পরে মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গং পূর্বের বিরোধপূর্ণ জমিতে বিবাদীগনের প্রবেশের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আদালতে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত বিরোধপূর্ণ জমিতে বিবাদীগনের (আবদুল জুব্বার গংদের) প্রবেশের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পরে বিবাদীগন বাদী পক্ষের বিরুদ্ধে শেরপুর আদালতে সাতধারা একটি সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। এদিকে ঘটনার দিন (১১ জানুয়ারী, বুধবার) মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গংরা শেরপুর আদালতে সাজানো সাতধারা মামলার হাজিরা দিতে যায়। এসুযোগে আব্দুল জুব্বার গংদের ভারাটিয়া সন্ত্রসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোস্তফা আলী ওরফে মাহা গং এর বাড়িতে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগমের বাড়ী ঘরে ভাঙ্গচুর করার পাশাপাশি রান্না করার চুলাসহ হাড়ি-পাতিল পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। রান্না করার বিকল্প সুব্যবস্থা না থাকায় অন্তত একদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে শিশু ও বৃদ্ধসহ পরিবারের সকল সদস্যদের। আর যেসকল নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি, সেগুলোও অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়িঘরে লুটপাটের সময় বাড়িতে থাকা এক নববধূসহ কয়েকজন বাধা দিলে তাদের উপর চড়াও হয়ে সন্ত্রাসীরা ঘরে প্রবেশ করে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা আদালতের রায় উপেক্ষা করে সন্ত্রাসী কায়দায় মনোয়ারার বাড়ীতে হামলা করে একটি থাকার ঘর ভেঙ্গে টিনের চাল, ভেড়া ও খুঁটিসহ সবকিছু ভ্যান গাড়িতে ভরে নিয়ে গেছে। সেইসাথে ঘরে থাকা সকল জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলেও তারা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নববধু জানায়, সে অন্যঘর থেকে জানালার ফাঁক দিয়ে গোপনে সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও চিত্র ধারন করার সময় সন্ত্রাসীরা টের পেয়ে তার একটি দামি এনড্রয়েট মোবাইল (অপ্পো) ও গলায় থাকা সোনার চেইন (গলার মালা) ছিনিয়ে নেয় এবং তার ওপর লজ্জাজনক ভাবে হামলা চালায়। এছাড়া সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগীর অন্য এক ঘরে প্রবেশ করে ড্রয়ারে থাকা গরু বিক্রির নগদ টাকাও নিয়েগেছে বলে অভিযোগকারীরা জানান। এবিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গেন্দু বলেন, আমি বিষয়টি বেশ আগেই শুনেছিলাম। যেহেতু বিরুধপূর্ণ জমির বিরোধ মিমাংসায় আদালত সঠিক একটি রায় দিয়েছেন। অতএব ওই জমি নিয়ে কারো কোন প্রকার কথা থাকার সুযোগ নেই। তাই এলাকাবাসী সন্তুষ্ট হয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন কেন এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটানো হলো তা কারো বোধগম্য নয়। চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গেন্দু জানান, এনিয়ে চন্দ্রকোনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি’র সাথে কথা হয়েছে, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন, প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিবেন বলেও আইসি নাকি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন।