সংসদ উপনেতা পদে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এম.পি চূড়ান্ত ভাবে মনোনিত হওয়ার সংবাদ গনমাধ্যমে প্রকাশের পরে বিভিন্ন মহলের ফেইসবুক টাইম লাইনে অভিনন্দন বার্তা পোস্ট করার ঝড় উঠেছে।
প্রবীণ রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব ৮১ বছর বয়সী মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা মনোনীত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারী) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভার সভাপতিত্ব করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদ উপনেতা পদে মতিয়া চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরী তা সমর্থন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এম.পি-কে সংসদ উপনেতা হিসেবে মনোনিত করে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। সভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নিয়ম অনুযায়ী সংসদ উপনেতা মনোনিত করার সিদ্ধান্তটি মহান জাতীয় সংসদের স্পিকারকে লিখিত ভাবে জানানোর পরে মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এরপর সংসদ সচিবালয় এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর থেকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গত ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তিনটি সংসদে একই পদে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এই পদটি শূণ্য হয়।
অনেক জল্পনা কল্পনার পরে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক সভায় প্রস্তাব ও সমর্থনের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এম.পি-কে সংসদ উপনেতা হিসেবে চূড়ান্ত ভাবে মনোনিত করা হয়।
সাজেদা চৌধুরীর মতো মতিয়া চৌধুরীও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি ২০০৯ ও ২০১৪ সালের শেখ হাসিনার সরকারে কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ১৯৯৬ সালের সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নারী হিসেবে প্রথম কোনো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আসা মতিয়া চৌধুরী গত শতকের ষাটের দশকে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তখন ডাকসুর জিএসের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এক সময়ের তুখোড় এই নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পরে রাজপথের লড়াইয়ে থাকেন সামনের কাতারে, হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতা হিসেবে।
জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা যখন দলে ‘সংস্কারের’ দাবি তোলেন, ঠিক তখন যে কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের একজন হলেন অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী।
‘সংস্কারপন্থি’দের দলের নীতি-নির্ধারণী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর মতিয়া চৌধুরীর উপর শেখ হাসিনার আস্থা আরো বেড়ে যেতে দেখা গেছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরপরই তথা ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিআর বিদ্রোহের পরে সহকর্মী হারানো বিক্ষুব্ধ সেনাদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সঙ্গী হয়েছিলেন রাজপথের সাহসী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত এ মতিয়া চৌধুরী।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দল ও সরকার আলাদা করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকে সরকারে না রাখলেও তার প্রতি আস্থার কমিতি হয়নি শেখ হাসিনা’র।
অনেকের ধারনা দেশ, জাতি ও দলের কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহসিকতা ও সততার জন্যই আজ মতিয়া চৌধুরী’র উপর সংসদ উপনেতার মতো এমন গুরু দায়িত্ব দিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতৃবৃন্দ ঐকমত্য হয়েছেন।