শেরপুরের নকলায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা সেই বৃদ্ধার জন্য ঘর নির্মাণ সামগ্রীসহ আর্থীক সহায়তা, খাদ্য সামগ্রী ও পোশাক নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ।
উপজেলার নকলা পৌরসভাধীন কলাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী ৪ ছেলে ও ১ টি মেয়ে সন্তানের জননী বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম (৭০) কনকনে শীতে রাস্তার পাশে পড়ে আছে, শুক্রবার রাতে এমন একটি খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে ইউএনও বুলবুল আহমেদ তাৎক্ষণিক ওই বৃদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি তার খাবার ও প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড়সহ জরুরি সামগ্রী প্রদান করেন তিনি।
শনিবার সকালে ইউএনও বুলবুল আহমেদ ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তার চিকিৎসাসহ অন্যান্য সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তিনি। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফাসহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ, নকলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি মাসুদ হাসান বাদল ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি সুষ্পষ্ট ভাবে জানার জন্য ইউএনও বুলবুল আহমেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধির একটি টিম ওই বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়ে তার সন্তানদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। পরে বৃদ্ধার ছেলে ও ছেলেদের স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্যদের বুঝিয়ে বললে তারা স্বেচ্ছায় তাদের মা বা শাশুড়ির থাকা খাওয়ার আর কোন সমস্যা হবেনা মর্মে অঙ্গীকার করেন।
ছেলে, ছেলেদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্যদের বিনাশর্তে ভুল স্বীকার করা ও এলাকাবাসীর মৌখিক আবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে বৃদ্ধার ছেলে ও ছেলেদের স্ত্রীকে প্রথম বারের মতো ক্ষমা করেদেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টি জানার পরে তাৎক্ষণিক তার চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। তাছাড়া জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ওই বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের বসবাসের জন্য ছোট্ট একটি ঘর নির্মাণের ২ বান্ডেল ঢেউ টিন, নগদ ৬ হাজার টাকা ও ২ টি শাড়ি প্রদান করা হয়েছে।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, জীবনের শেষ বয়সে কোন বাবা-মা যেন অবহেলার স্বীকার না হন, এর জন্য সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভরণ পোষনসহ কোন ভাবে অবহেলা করলে আইন মোতাবেক সন্তানদের অর্থদন্ড বা কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। তবে জীবনের শেষ বয়সে প্রতিটি মা-বাবাকে যেন কোন প্রকার অবহেলায় দিনাতিপাত করতে না হয় এর জন্য সামাজিক ভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলেও ইউএনও মনে করেন।
এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য সন্তানদের অর্থনৈতিক ধৈন্যতাকেও কেউ কেউ দায়ী করছেন। তারা জানান, বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার ঔষুধ পথ্যসহ বাড়তি অনেক কিছুর দরকার হয়। যা অনেক সন্তানদের পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনা। তবে বাবা-মাকে থাকা খাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে, এতে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া উচিত হবে না বলেও অনেকে জানান।