তিল চাষের অনুকূল আবহাওয়া থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে খুব অল্প পরিমাণ জমিতেই তিল চাষ করা হয়। যদিও খাদ্য-পুষ্টি, তেল, পশু খাদ্য, শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি বিবিধ উদ্দেশ্যে তিল বীজ ও তিলের গাছ ব্যবহৃত হয়।
ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটির অনাবাদি জমিতে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা তিল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।
আর তাইতো শেরপুরের নকলায় দিন দিন বাড়ছে তিল চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা। তিল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোণা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী ও উরফা ইউনিয়নের অগণিত চাষি।
ব্রহ্মপুত্রনদ সহ বিভিন্ন নদী ও শাখা নদীর তীরবর্তী অনুর্বর পতিত জমিতে অন্যকোন ফসল ভালো না হলেও তিলের উৎপাদন ও দাম বেশি পাওয়ায় এ ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪ থেকে ৫ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। যা গেল বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গতবছর ২ হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছিল। এখানকার উৎপাদিত তিলের দানা অধিক পুষ্ট হওয়ায় বেশ চাহিদা রয়েছে।
চাষের অনুকুল আবহাওয়া থাকা সত্বেও খুব অল্পপরিমান জমিতেই তিল চাষকরা হয়। তবে নকলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের যে দিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই শুধু তিল গাছের সবুজের সমারোহ চোখে পরে।
শষ্য ভান্ডার খ্যাত শেরপুরের নকলায় বিলুপ্তপ্রায় তিলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাতে তিলে নবযুগের সূচনা হবে এমন ধারনা করেছেন সংশ্লিষ্ঠরা। বহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার অপেক্ষেকৃত অনুর্বর জমিতে ধানের ফলন কম হওয়ায় ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা ধান ছেড়ে তিলসহ অন্যান্য শস্য চাষে ঝুঁকছেন।
কৃষকরা জানান, আগে যে পরিমান তিলের তেল ও তিলের অন্যান্য পন্য আমদানী করা হতো এবছর থেকে তা অনেকাংশে কমে যাবে। কয়েক বছর ধরে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে তিল চাষে কৃষকমনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুুমে উপজেলায় ৪ থেকে ৫ হেক্টর জমিতে শতাধিক কৃষক তিল চাষ করেছেন। এছাড়া অন্যান্য ফসলের আইলে তিলের আবাদ সবার নজর কেড়েছে।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, বাছুরআলগার কৃষক মুক্তার হোসেন, মোকলেছুর রহমানসহ অনেকেই জানান, তিল চাষে কোন খরচ নেই বললেই চলে। যে খরচ হয় তার তুলনায় ৫/৬ গুন বেশি লাভ পাওয়া য়ায়। কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শে তিলের যত্ন নিচ্ছেন তারা। তাদের তিল ক্ষেতের অবস্থা দেখে অনেকে মনে করছেন এবারের উৎপাদন কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা ছাড়াবে। উৎপাদন খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি পাওয়ায় আগামীতে তিল চাষীর সংখ্যা ও জমির পরিমাণ অনেক বাড়বে এমনটাই আশাব্যক্ত করছেন অনেকে।
শস্য মজুদকারী তথা মজুদ ব্যবসায়ীরা জানান ধান, গম ও ভূট্টা মজুদ করার চেয়ে তিল বা সল্পকালীন অন্যান্য কৃষিপন্য মজুদ করলে লাভ ও কদর উভয়ই বেশি পাওয়া যায়। এসব শস্যে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বাংলাদেশে চাষকৃত তৈল ফসলের মধ্যে তিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তৈলজাত ফসল। এই তৈলজাত ফসলটি অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ফলানো সম্ভব। এই ফসল আবাদে খরচ ও শ্রম কম লাগে। তিল অন্যান্য ফসলের আইলেও ফলানো যায়। তাই কৃষকরা দিন দিন তিল চাষে ঝুঁকছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ।