শেরপুরে ‘করোনা (কোভিট-১৯) উত্তর শিক্ষা ব্যবস্থা : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৯ নভেম্বর) নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি এ সংলাপের আয়োজন করে।
শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান।
নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ-এর সঞ্চালনায় সংলাপের আলোচনায় অংশ নেন- শিক্ষাবিদ, গবেষক ড. আব্দুল আলীম তালুকদার, শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন সারওয়ার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাদির, শওকত হোসেন, ইদ্রিসিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফজলুর রহমান, তেরাবাজার কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী ও আয়শা সিদ্দিকা প্রমুখ।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, কবি ও শিক্ষক জ্যোতি পোদ্দার, কবি রাবিউল ইসলাম, শামীমা পারভীন, মিষ্টি বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. শামীম হোসেন, চলচ্চিত্রকার আবু রায়হান পাভেল, শিক্ষার্থী ফারাবি জাবীন সয়েরী, জান্নাতুল তারিন, রাবেয়া রায়হান প্রকৃতি, ইমামুল হাসান তানভীর ও পুণম রায় রিমি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন- করোনার কারণে সরাসরি ক্লাস করতে নাপারায় শিক্ষার্থীদের মনোজগতের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তারা এখন ক্লাসে শিক্ষককে প্রশ্ন করতে ভয় পাচ্ছে। এতে তাদের জ্ঞান ভান্ডার সহজে খুলছে না। নিচের ক্লাসের ভীত শক্ত হওয়ার আগেই ওপরের ক্লাসে প্রমোশন হওয়ায় শিখন পদ্ধতিতে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা এখন ঠিকমতো রিডিং পড়তে পারেনা। অনলাইনে ক্লাশ হলেও সকল শিক্ষার্থী সে সুযোগ সমানভাবে পায়নি। যে কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামনে ২০২৩ সালে নতুন সিলেবাসের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে। এতে করে সামনের দিনে নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে তারা মনে করছেন। অনেকেই আশংকা করেছেন, এতে হয়তো শিক্ষার্থীদের পাঠ দক্ষতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যেতে পারে।
সংলাপে করোনা উত্তর ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা ব্যবস্থাকে কীভাবে দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নানা পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা উঠে আসে। করোনা উত্তর শিক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংকট উত্তরণের উপায় হিসেবে যে সব সুপারিশ ওঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। মুখস্ত বা গাইড নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে বাস্তবমুখী এবং অনুশীলনধর্মী শিক্ষাপদ্ধতি চালু করতে হবে। শিশুদের স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ডাক্তার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ হওয়া নয়; নৈতিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য পাঠ্য সিলেবাসকে আরো যুগোপযোগী ও আধুনিক করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।
এ সংলাপে শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুধীবৃন্দসহ অন্তত ৭০ জন অংশগ্রহণ করেন।